বিশেষ প্রতিনিধি: শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় গৃহকর্মী যেন পরিবারেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকাল থেকে সন্ধ্যা—ঘরের কাজ সামলানো, বাচ্চাদের দেখভাল করা, অসুস্থ-বয়স্কদের খেয়াল রাখা, সব মিলিয়ে তাদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক গৃহকর্মী দীর্ঘদিনের সেবায় পরিবারের সদস্যের মতোই হয়ে ওঠেন তারা। তাদের উপর নির্ভরশীলতা এতটাই বেড়ে যায় যে, ঘর-বাড়ির নিরাপত্তা থেকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সবই তাদের ওপর ভরসা করে থাকে।
কিন্তু বাস্তবতা কখনো কখনো ভিন্ন ছবি তুলে ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, পরিচিত পরিচর্যার আড়ালেই কিছু গৃহকর্মী ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কোথাও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা, কোথাও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা—এমন নানা অভিযোগ প্রতিনিয়ত উঠে আসছে গণমাধ্যমে।
১. সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করুন: গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার পরিচয় নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্যসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন আ্পনারা। তথ্যগুলো নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়া ভালো। এতে কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস থাকলে পুলিশ সহজেই শনাক্ত করতে পারবে এবং আপনার পরিবারও নিরাপদ থাকবে।
২. পূর্ববর্তী কর্মস্থল যাচাই করুন: গৃহকর্মী কোথায় কাজ করেছে, কেন চাকরি ছেড়েছে—এসব তথ্য আগে থেকেই খতিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে তার আগের কাজের জায়গায় যোগাযোগ করে সত্যতা নিশ্চিত করুন। এতে তার চরিত্র, আচরণ এবং কাজের দক্ষতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমায়।
৩. পারিবারিক তথ্য নিশ্চিত করুন: গৃহকর্মীর স্থায়ী ঠিকানা, পরিবারে কতজন সদস্য, কারা কোথায় থাকে— এসব তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। প্রয়োজন হলে তার স্থায়ী ঠিকানায় ফোন করে বা কারও মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন। এখন হয়তো এসব ঝামেলাময় মনে হবে, কিন্তু কোনো সমস্যায় পড়লে এই তথ্যগুলোই আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
৪. সিসি ক্যামেরা স্থাপন করুন: বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবেশমুখে সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরিচিত কারও যাতায়াত সহজেই চোখে পড়ে। চাইলে ঘরের ভেতরেও ক্যামেরা স্থাপন করা যেতে পারে, যাতে অনুপস্থিতিতেও গৃহকর্মীর আচরণ বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ নজরে রাখা সম্ভব হয়। এতে পরিবারে নিরাপত্তার পাশাপাশি মানসিক স্বস্তিও বাড়ে।
৫. মূল্যবান জিনিসপত্রের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকুন: স্বর্ণালঙ্কার বা টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র গৃহকর্মীর অগোচরে রাখুন। লকারের চাবি সবসময় নিজের কাছে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে লকার বা আলমারি থাকা কক্ষ আলাদা করে লক করে রাখুন।
৬. মানসিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করা: গৃহকর্মীর মানসিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। যদি কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করেন, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া, তার চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। এতে বোঝা সহজ হবে সে লোভী বা অসৎ মনোভাবের কি না।
অতিরিক্ত সতর্কতা : বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বস্ত এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার প্রতিষ্ঠান সাধারণত প্রাথমিক যাচাই, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং প্রয়োজনে বদলির সুবিধা প্রদান করে। তবে নিশ্চিত হতে হবে এজেন্সি বিশ্বাসযোগ্য, লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং পূর্ববর্তী গ্রাহকদের রিভিউ ভালো। নিয়োগের শর্তাদি পরিষ্কারভাবে জানা থাকলে কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

