পরিচয়হীন মা হওয়া পাগলির স্থায়ী পূর্ণবাসন চায় ভিক্ষুক আয়েশা বেগম

0
50
পরিচয়হীন মা হওয়া পাগলির স্থায়ী পূর্ণবাসন চায় ভিক্ষুক আয়েশা বেগম
পরিচয়হীন মা হওয়া পাগলির স্থায়ী পূর্ণবাসন চায় ভিক্ষুক আয়েশা বেগম
নাজমুল হাসান:

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর পূর্বপাড়া ৫নং ওয়ার্ড মুন্সী বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা বাক প্রতিবন্ধী পাগল মেয়েটি মা হয়েছে ঠিক কিন্তু বাবা হয়নি কেউ। বিলের ধারে পাওয়া সেই বাক প্রতিবন্ধী পাগলি আকলিমার স্থায়ী পুনর্বাসন চায় অসহায় ভিক্ষুক আয়েশা বেগম।
জানা যায়, গত ৫ মাস পূর্বে বুড়িরপাড় বাজারে মনির হোসেন নামে এক ব্যাক্তি মাইকিং করে শীতের কম্বল আসহায়দের দেওয়ার জন্য আহবান করেন। সেই মাইকিং শুনে উপজেলার ৬ নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর গ্রামের পূর্ব পাড়া মুন্সি বাড়ির হাকিম মুন্সির মেয়ে আয়েশা বেগম কম্বল আনতে যান। ঐ বাজারে কম্বল আনতে গিয়ে আয়শা বেগম (৪৫) বুড়ির পাড় বিলের ধারে মানষিক বাক প্রতিবন্দী মেয়েটিকে ফেনা পাতা ও মাটি খেতে দেখতে পান। সেখান থেকে আয়শা বেগম বাক প্রতিবন্দী মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার পড়নে থাকা কাদামাটি যুক্ত কাপড় গুলো পরিষ্কার করে তাকে ভাত খেতে দেন। পাগল মেয়েটির পেটে বাচ্চা আছে সন্দেহে তাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে বুঝতে পারেন মেয়েটির পেটে বাচ্চা আছে। তখন মেয়েটিকে বাড়িতে এনে তাকে সেবাযত্ন করেন। পাগল বাক প্রতিবন্ধী মেয়েটি তার আশ্রয়দাতা কে মারধর করত, তার পরও কষ্ট করে মেয়েটির গর্ভপাত পর্যন্ত আশ্রয়ে রাখেন। অসহায় আয়েশা বেগমের ঘরে ৫ মাস আশ্রয়ে  থাকার পর বেওয়ারিশ পরিচয়হীন পাগলিটি ১২ই মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
ভিক্ষুক আয়েশা বেগম জানান, আমার স্বামী আমার সন্তানকে ফেলে চলে যাওয়ার পর আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি। আমরা ৪ বোন ১ ভাই, আমরা অভাবের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর আমার বাবার বাড়িতে আমি আশ্রয় নিয়ে ছেলেকে নিয়ে থাকি। এরপর থেকে আমার সংগ্রামী জীবন শুরু। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, ভিক্ষা করে ছেলের এবং পরিবারের সবার খাবার ব্যবস্থা করি। কয়েক মাস পূর্বে আমি কম্বল আনতে যাওয়ার পথে আমি পাগল “আকলিমাকে” বিলের মধ্যে দেখতে পাই। সে ফেনা পাতা ও মাটি খাচ্ছিল। সেটা দেখে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। এই পাগল মেয়েটির এখন বাচ্চা সহ যাবতীয় সবকিছু আমিই করি। সে প্রসাব পায়খানা করল বলতে পারেনা সেগুলো আমি পরিষ্কার করি। সে মুখে কিছু বলতে পারেনা, মানষিক প্রতিবন্দী, মাঝে মাঝে কাগজ কলম হাতে দিলে নিজের নাম ‘আকলিমা’ লিখতে পারে আর কিছুই পারেনা। এখন তাকে ও নবজাতককে নিয়ে আমি বিপাকে আছি। আমি চাই সরকার তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করুক।
স্থানীয় জামাল হোসেন বলেন, আয়েশা বেগম একজন ভিক্ষুক । ভিক্ষা করে সবার খাবার জোগাড় করে। সে খুব কষ্টে জীবনযাপন করে সেটা আমরা সবসময় দেখে আসছি তাকে সাহায্য সহযোগিতা করি। কিন্তু সে এমন একটি কাজ করেছে আমাদের সমাজের অনেক বিত্তবান থাকা সত্ত্বেও এটিকে কেউ আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি। আয়েশা বেগমের মানবিকতা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার এই মানবিকতা আমাদেরকে অনেক কিছু শেখায়। আয়েশা বেগম এবং পাগল মেয়েটির সন্তানসহ সরকারিভাবে একটি স্থায়ী পূর্ণবাসন করে দিলে ভালো হয়। তার পাশাপাশি যদি পাগল মেয়েটির পরিবারের সন্ধান খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
ঘোষঘর গ্রামের পূর্ব পাড়া মুন্সি বাড়ির হাকিম মুন্সির মেয়ে আয়েশা বেগম। আয়েশা বেগমের ৪ বোন এক ভাই। পরিবারের সবার বড় তিনি। আজ থেকে ২৬ বছর আগে বিয়ে হয় সিলেট। স্বামী বাবুল মিয়া যৌতুকের টাকা না পেয়ে একমাত্র ছেলেকে ৪০ দিনের সময়  রেখে চলে যায়। আয়েশা বেগমের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখে নাই। পরবর্তীতে অসহায় আয়শা বেগম বাবার বাড়িতে এক মাত্র পুত্র সন্তান নিয়ে  আশ্রয় নেন। তার এক মাত্র ভাই নূরনবী (৩২)ও প্রতিবন্দী। নিজ পুত্র এবং প্রতিবন্ধী ভাইয়ের ভরন পোষনও তার ভিক্ষাবৃত্তিতে চলে।
আলোকিত প্রতিদিন/৭ এপ্রিল ২০২৫/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here