আজ শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরিশাল আওয়ামীলীগ ও পুলিশ সংঘর্ষ, গাড়ী চলাচল বন্ধ

-Advertisement-

আরো খবর

ব্যুরো চিফ, বরিশাল :
বরিশাল নগরের থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এসময় সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের লক্ষ্য করে আনসার সদস্যদের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনার পর থানা কাউন্সিলসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান মধ্যরাতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, যে অবস্থায় আমি আছি সেখানে বক্তব্য দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমার কোভিডে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা-মা সরকারি বাসভবনের ওপর থেকে দেখছিলন কি হচ্ছে বাইরে। তিনি বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের অফিস কম্পাউন্ডের পাশে ঘোরাঘুরি করছিলো। তখন আনসার সদস্যরা আমাকে জানায়, বেশকিছু ছেলে-পেলে আমাদের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেছে। এটা সিকিউর এলাকা তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা বলেছে। তখন তাদের আমি চলে যেতে বলার জন্য আনসার সদস্যদের বলি। এরপরপরই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রাজীব নামে এক ব্যক্তি কারো পারমিশন না নিয়ে, কারো তোয়াকা না করে আমার বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। আমি নিচে নামার আগেই তাদের ঘরের দরজার সামনে দেখতে পাই। সে তার পরিচয় দেওয়ার পর আমি বললাম এতো রাতে কি কারণে এসেছেন এখানে। তখন সে জানায় নির্দেশনা রয়েছে তাই তারা ব্যানার ছিঁড়ছে। তখন আমি বললাম এটা সরকারি কম্পাউন্ড, এখানে সরকারি অফিস-আদালত রয়েছে, আমরা সরকারি অফিসাররা এখানে থাকি। আর এতো রাতে এখানে এগুলো শোভন নয়, কাইন্ডলি আপনারা চলে যান, কালকে যেটা করার করবেন। পার্টির যা সিদ্ধান্ত সেটা পরে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানালেও সে বের হয়ে যাচ্ছে না, তো যাচ্ছে না। পরে আমি দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গেলে মেইন গেট আনসার সদস্যদের সহায়তা আটকে দেই। এরপর আমরা উপরে বাবা মায়ের সঙ্গে বসা। তখন হঠাৎ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬০-৭০ জন লোক এখানে আসে। আনসার সদস্যরা ভয়ে দৌড়ে উপরে উঠে এসে আমাকে জানায়, স্যার আপনার বাংলোর মধ্যে ৬০-৭০ জন ঢুকতাছে। তারা যখন আমার বাংলোর সামনে তখন আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। তখন একজন আমাকে পরিচয় দিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান বাবু। তার পাশে বহু লোকজন, সেখান থেকে একজন খুব উচ্চস্বরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের নাম ধরে গালিগালাজ করছিলো। তখন আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি ভাই আপনার পরিচয়টা। তিনি তখন তার নাম সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলে জানায় এবং বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। এসময় তার পাশ থেকে একজন বলছিলো তুই পরিচয় দিয়ে কি করবি? একসময় কথা বলতে বলতে যখন আমার পেছন দিকে লোকজন আসতে শুরু করে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ঘিরে ধরা হচ্ছে। তখন আনসার সদস্যদের ইশারা দিলে তারা আমার কাছে চলে আসে। আনসাররা বাঁশি বাজালেও যখন তারা সরছিলো না তখন আনসার সদস্যরা ফোর্স করছে। তখন যে যার মতো করে দৌড়াইছে। আর তখন আমি নিজে মাহামুদ হাসান বাবুর হাত ধরে ফেলেছিলাম এবং আনসারের হাতে তুলে দেই। তাদের বের করে দিয়ে আমাদের গেট আটকে দিয়েছি। তারপরে দুইশ, তিনশ, চারশ না পাঁচশ আমি জানি না, বহু লোক এসে আমাদের সরকারি গেটটাকে ভেঙে তচনছ করে ভেতর থেকে ঢুকে আমার ঘরের বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে। ভাগ্যিস আমার উপজেলার অফিসাররা চলে এসে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা আটকে উপরে নিয়ে যায়। কারণ ওরা নীচতলায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত চলে এসেছিলো। যে সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য দিয়ে না গেলে বোঝা যাবে না। আমার পক্ষ থেকে গুলি করার অর্ডার (ডেসপাসের অর্ডার) দেওয়া হয়নি, তবে আমার বাসার সামনে যখন আমাকে ঘিরে ধরা হবে তখন আনসার সদস্যরা তো আমাকে সেভ করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।এদিকে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের গুলিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও প্যানেল মেয়র মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকনসহ ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। এদিকে হামলার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থানা কাউন্সিলের প্রধান ফটকে এসে জড়ো হয়। এসময় পুলিশ  গুলি ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে মেয়র মহোদয় আসলে তাকেও গুলি করা হয়, ভাগ্যক্রমে নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় সে গুলির হাত থেকে রক্ষা পায়।  বিক্ষুব্দজনতা বরিশাল পুটয়াখালী মহসড়কে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়।সেইসঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশনের স্টাফদের সঙ্গে ঝামেলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। শুনেছি আনসার সদস্যরা গুলি চালিয়েছে। আর এ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে পুলিশ। এ ঘটনার জেরে থানা কাউন্সিলের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ওপর ময়লা ও ময়লাবহনকারী গ‌াড়ি দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়েছে করপোরেশনের কর্মচারীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেটুকু জানিয়েছেন, তার বাসভবন এলাকায় কিছু লোক ব্যানার খুলতে আসে। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতের বেলা এভাবে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন তিনি। সেসময় আগত লোকদের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডা হয় এবং তারা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অমান্য করে বাসভবনে প্রবেশ করতে উদ্যত হন। এসময় নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত আনসার বাহিনী গুলি ছোড়ে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সেসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। অপর দিকে এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে পুরো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত দাবী করেছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল রাতের ঘটনার জন্য বরিশাল মহাসড়ক গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়, পরিস্হিতি স্বাভাবিক হলে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯আগস্ট ২০২১/ এইচ
- Advertisement -
- Advertisement -