:: ইলিয়াস হোসেন, সাতক্ষীরা ::
১৮০০ শতকে ভারতের র্যাস্যি প্রদেশ থেকে এসে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে উপকূলীয় বন জঙ্গল কেটে ভূমিতে রূপান্তরিত করে বসবাস শুরু করে আদিবাসী মুন্ডারা। বর্তমানে বসবাসের জন্য নিজস্ব কোন জমি জায়গা নেই তাদের। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তাদেরকে বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় আটটি ইউনিয়নে ৪শ ৬০টি পরিবার তিন হাজারের অধিক জনসংখ্যা নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এদের অধিকাংশই সুন্দরবনের কাঁকড়াজেলে ও দিন মজুর। অনেকে ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতো। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসে সতর্কতামূলক হোমকোয়ারেন্টিন তাদেরকে মহাসংকটে ফেলেছে। কারন, এতদিন দিনের কাজেই দিন কেটে যেত তাদের। সারাদিনের আয় দিয়ে কোন মতে চলত তারা।
জানা যায়, মুন্ডাদের মধ্যে যে দুই চারজন শিক্ষিত ও অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত, তারা মাস দেড়েকের খাবার মজুদ করে রেখেছিল। তাদেরও এখন বেহাল দশা। সব খাবারই প্রায় শেষের পথে।
মুণ্ডা সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, সরকারি-বসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় ত্রাণ পেয়েছে ২১৫ পরিবার। এটাই বেশি বেশি প্রচার হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু সেই ত্রাণে কতদিন চলবে, তা কেউ খবর নেয়নি। ওতে যা ছিল তা একটি পরিবারের জন্য দুই-তিন দিনের খাবার।
শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে ইউনিয়নের জেলেখালি গ্রামের আদিবাসী মুন্ডা পল্লীর বাসিন্দা রুমা মুন্ডার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। তিনি বলেন, আমার জীবনের এত বড় মহামারী দুর্যোগ কখনো দেখিনি। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলা হয়েছে, বুলবুল হয়েছে। ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। কাজ করে খেতে পেরেছি। ঈশ্বর কি দুর্যোগ দিয়েছে ঘরের মধ্যে থেকে বের হতে পারছি না। খুবই কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে ঘরের খাদ্য পুরিয়ে আসবে। তখন না খেয়ে থাকতে হবে।
বুড়িগোয়ালিনী বসবাসরত আদিবাসী জগদিশ চন্দ্র মুন্ডার বয়স ৩৫ বছর। তিনি জানান, মহামারী করোনা দুর্যোগের কারণে সরকার ঘর থেকে বের হতে পারছি না। কাজ করতে পারছিনা। কী খাব ? ছেলেমেয়েকে কী খাওয়াবো ? সে চিন্তায় মথায় কাজ করে না। একটা ত্রাণের ব্যাগ পেয়েছি। তাতে তিন দিনের খাবার ছিলো। তা ও ফুরিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবো? ঈশ্বরই তা ভালো রকম জানেন।
দাতিনাখালী গ্রামের কনিকা মুন্ডা বলেন, কাঁকড়ার প্রজেক্টে চাকরি করতাম। প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা বেতন পেতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে থাকায় ঘরে বসে এক প্রকার না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন চলবে তা কিছুই বুঝতে পারছি না।
আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করে সামস নামক একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটির পরিচালক কৃষ্ণপদ মন্ডল জানান, আমরা আদিবাসী মুন্ডাদের নিয়ে কাজ করি। এখনো পর্যন্ত তাদেরকে সে ধরনের সহযোগিতা করতে পারেনি। ২১ তারিখ পর্যন্ত ২শ ১৫টি পরিবার সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছে। আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষ গুলো অনেক দরিদ্র।
শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক বলেন, প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের ত্রাণ দেয়া অব্যাহত রেখেছি। যতদিন করোনা প্রাদুর্ভাব থাকবে ততদিন আদিবাসীদের জন্য ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে। যদি কোন আদিবাসী ত্রাণ না পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এর মুঠোফোনে (০১৭……৯৫) বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।