সৈয়দ রনো:
ক্লান্ত বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরি, স্ত্রী-সন্তান গভীর ঘূমে অচেতন
রাতের কোনো এক প্রহরে বেজে উঠে টুংটাং শব্দ
কেটে যায় তন্দ্রার ঘোর, বেলকনিতে দাঁড়াই
চারপাশে ভৌতিক নীরবতা, যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল নেই
মানুষের উর্ধশ্বাস, ছুটে চলার করুণ চিত্র দেখি
গভীর ঘুমে অচেতন মহল্লার প্রতিটি তল্লাট
কেবল কতোগুলো অর্ধ উলঙ্গ সোডিয়াম বাতি দেখি
জোনাকীর মতো মিট মিট করে জ্বলছে
জ্বলছে দেয়ালে সাটানো মহামানবের ঘুমন্ত ছবি
কারুকাজ নয়, বিখ্যাত কোনো চিত্রকল্পও নয়
সাধারণ রঙতুলিতে আঁকা ছবি
হঠাৎ ছবিটি জীবন্ত হয়ে উঠে ঘরজুড়ে বিলাতে থাকে সুমিষ্ট ঘ্রাণ
তন্ময় হয়ে দেখি নগরায়নে গড়ে ওঠা দালান কোঠা
যেখানে বিলীন হয়েছে সারি সারি পাইনের বন
বিনষ্ট হয়েছে বিশাল ধান কাউনের মাঠ
প্রকৃতির বুক চিরে তর তর করে বইছে রক্ত নহর
অমবস্যার গভীর অন্ধকারে ঐ খানে দেখেছিলাম বাতাবী লেবুর বাগান
রক্তকরবীর চারা, জুঁই চামেলী টগর হাসনা হেনা ফুলের
গন্ধে মৌ মৌ বাতাস, এখন আর নেই
হারিয়ে গেছে সব, হারিয়ে গেছে কালের বিবর্তে কাল
আমিও হারিয়ে যাব একদিন
ভাবছিলাম স্মৃতির এ্যালবাম খুলে
হঠাৎ প্রচণ্ড গুলির শব্দে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সার্কিট হাউজ
ক্ষণিকেই বাংলার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার
থমকে পড়ে গোটা দেশ,সমরে সাহসী সেই বলিষ্ঠ কন্ঠের মহান পুরুষ
বাংলার মানচিত্র বুকে আগলে মেঝেতে পড়ে থাকেন মহান নেতা কালের সাক্ষী হয়ে পাশে পড়ে থাকে রৌদ্রচশমা
মানুষের এক মুঠো ভাত আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায়
ছুটেছেন বাংলার আনাচে কানাচে শ্যামলীয়া গাঁয়
শহীদ হন সেই মহান স্বাধীনতার ঘোষক।জানতে ইচ্ছে করে তোমার রক্তের বদলে কতটুকু স্বার্থক হয়েছে বাংলাদেশ ?
চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজের মেঝেতে
লেগে থাকে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ
দূর থেকে ভেসে আসে অর্ধাহারী অনাহারী মানুষ আর
পশুপাখির করুণ আর্তনাদ
যতোদূর চোখ যায় দেখি চার দেয়ালে বন্দী
কারফিউঘেরা পূর্ণিমা রাত
আকাশ দেখি গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা
অপুষ্টিতে ভোগা অর্ধাকৃতির এক ফালি চাঁদ
ঘুমিয়ে পড়ে আকাশের বুকে
দেখি দেয়ালে সাটানো সেই চিরচেনা ছবি
শাহাদৎ আঙুল উঁচিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছেন
ছবি খানিকটা নড়েচড়ে ওঠে
কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে- যারা একাত্তর দেখেনি
যারা কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনেনি
যারা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি- তাদের বলছি
দেশটা স্বাধীন হয়েছে স্বনির্ভরতার জন্য
দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য
বন্ধ হবে বৈষম্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে মত প্রকাশের অধিকার
যারা চুয়াত্তরের ভয়াল দুর্ভিক্ষ দেখেনি
দেখেনি মানুষের হাহাকার, অর্ধাহারে অনাহারে
বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরা মানুষের কংঙ্কাল
তাদের বলবো। বাংলাদেশের কলঙ্ক মুছে,গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন নেতা। মানুষের মুখে তুলে দিয়েছেন, দু’বেলা দু’মুঠো ভাত
সময় গড়িয়েছে বহুদূর
চোখের সামনে ইতিহাসের বাস্তব চিত্র
স্মৃতি মন্থনে নির্মম হয়ে ওঠে, মনের গভীরে চলে ভাঙ্গনের খেলা
অসহ্য মানষিক যন্ত্রণায়,রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে তাকাই
দেয়ালে সাটানো সেই মহামানবের বজ্রশপথ মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
দেয়াল ভেদ করে ক্রমশ আকাশের দিকে ওঠে যায়
সপ্ত আকাশ ভেদ করে আরশ কুরসীতে
এরপর হাত দুটি মেলে নেতা প্রর্থনা করেন
শত ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে, দেশ এগিয়ে যাক আগামীর পথে
গড়ে উঠুক ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ
তাকিয়ে থাকি গভীর অনুরাগে
স্বধীনতার ঘোষকের চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি
হাস্যোজ্জ্বল নেতার কণ্ঠে স্পষ্ট শুনতে পাই
স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা, ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’
বজ্রকণ্ঠে স্বধীনতা যুদ্ধের ঘোষণায়
লক্ষ কোটি আবাল বৃদ্ধ বণিতা, ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে
চলে রক্তক্ষয়ী মুক্তির সংগ্রাম
নয় মাস প্রত্যক্ষ সমরে, অবতীর্ণ হয়ে ছিনিয়ে আনেন
লাল সবুজের পতাকা, অখণ্ড মানচিত্র, অতঃপর বাংলাদেশ
যুদ্ধ শেষে ক্লান্তি মুছে নেমে আসেন পদ্মা মেঘনা যমুনার মোহনায়
শহীদ জিয়ার শরীর দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ে অফুরন্ত লবণাক্ত ঘাম
মিশে যায় পদ্মা নদীর বহমান স্রোতে
হাতে তুলে নেন উন্নয়নের কোদাল
গরীব দুখিদের যাপিত জীবনের কলরব শুনে
তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলান নেতা,দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেন
‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’