মো:ওমর ফারুক ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার এক সাংবাদিক নামধারীর নামে চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জানা যায়, সে আগে থাই-ভিসা প্রতারণার ও দেহ ব্যবসার সাথে ওতপ্রোত ভাবে সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ-রংপুর সদর এলাকায় যুক্ত ছিল। গত এক বছর আগে প্রতারক ও দেহ ব্যবসার দালালি পরিচয় মুছে আড়াল করতে তারাগঞ্জ এলাকায় এসে সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্নজন থেকে চাঁদাবাজি করছে। এই নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ নেতাদের দালালি ও শেল্টারে চলে গত ৫ আগস্টের পর থেকে হঠাৎ অতি বিএনপি সেজে গেছেন বলে এলাকার অনেকে জানান। তার এমন গতিবিধির কারণে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা চরম বিব্রত হয়ে পার্টি অফিসে ডেকে একাধিকবার সতর্ক করেছে । সর্বশেষ সে গত শুক্রবার তারাগঞ্জ হাট এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে ।
তারাগঞ্জ থানায় অপরাধী চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা নাজিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয় মেজাজুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী । মেজাজুল জানায়, আমার প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার (৭ মার্চ ২০২৫) এই বেয়াদব ছেলে এসে ছবি তুলে সরাসরি হুমকি দেয় , সে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চায় । কিসের জন্য টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে সে বলে আমার ইসলাম ট্রেডার্স নাকি ড্রেনের ওপর নির্মিত । তারাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার হাটের সরকারি জায়গা উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা হয়েছে । সেখানে আমার প্রতিষ্ঠানের বাড়তি যে অংশ বাইরে ছিল তা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ভেঙে ফেলেছি । আর ড্রেন দৃশ্যমান অবস্থায় দখলমুক্ত রয়েছে। তাকে সেটি দেখালেও, সে টাকা ছাড়া কোন কিছুই শুনতে নারাজ । তার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে আমার পরিচিত এক সাংবাদিক সোহেলকে ঘটনাস্থলে ডাকি। উগ্র মেজাজি নাজিম তার গায়েও হাত তোলে । চাঁদাবাজ নাজিম ও তারই আপন সহোদর ভাই নাজমুল (ভূয়া সাংবাদিক) সেদিন আমার দোকানের সামনে কুরুক্ষেত্র রচনা করে সোহেলকে আহত করে পালিয়ে যায় । যাওয়ার সময় হুমকি দেয়, টাকা না দিলে বিএনপির ছেলেপেলে দিয়ে দোকানে তালা ঝুলিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে । গনতান্ত্রিক দেশে এমন স্বৈরাচারী কায়দায় চাঁদাবাজির নজির আমি দেখিনি। বাধ্য হয়ে থানায় মামলা দিয়েছি ওই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিকতার আড়ালে একটি অপরাধী চক্র নিয়ে তার নিয়মিত চলাফেরা। কিছু ভুঁইফোড় নামধারী ভূয়া সাংবাদিক নিজে তৈরি করে তাদের সাথে নিয়ে মিথ্যা নিউজের কথা বলে ভয় ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরবর্তীতে নিজে শালিশি দরবারের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে একটি মোটা অংশের ভাগ নিয়ে বাকিদের বন্টন করে দেয় ।
চাঁদাবাজ নাজিম মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে হয়রানি করতে পটু। নারী কেলেংকারিতেও রয়েছে তার সিদ্ধ হস্ত, রয়েছে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ । এ পর্যন্ত ৩ টি বিয়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । সর্বশেষ শিখা নামের এক তরুণীকে ব্লাকমেইল করে বিয়ের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তার নারী লিপসুতার হাত থেকে কলেজ পড়ুয়া কিংবা অন্যের গৃহবধুও নিরাপদ নয় বলে কুর্শা ইউনিয়নে অনেকেই জানিয়েছেন । এছাড়াও রংপুর সদরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ দেহ ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ও যাতায়াত রয়েছে । বন্ধু মহলে নাজিম নামটি দেহ ব্যবসায়ী দালাল নামেই সুখ্যাতি অর্জন করেছে ।
নাজিমের বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। এই ভুঁইফোড় সাংবাদিক চাঁদাবাজ ও নারী সাপ্লায়ার নাজিমের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা করেন তারাগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সচেতন নাগরিক সমাজ ।
প্রেস ক্লাব তারাগঞ্জের সভাপতি খবির উদ্দিন জানান, তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের অধীনস্থ যেসব সাংবাদিক আছেন, এরা কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নন। প্রত্যেক সাংবাদিক তাদের নিজ নিজ কর্মব্যস্ততা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোনো চাঁদাবাজির সাথে তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যরা জড়িত নন। তিনি বলেন, উল্লেখিত নাজিম তারাগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য নন। তিনি মনে করেন, প্রশাসনিকভাবে সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার ।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রহিদুল ইসলাম জানান, সাংবাদিকতায় প্রতি নিয়ত পাঠকের সাথে বোঝাপড়া হয় । একজন আদর্শ সাংবাদিক অবশ্যই বিচক্ষণ হবে , হবেন স্বচ্ছ , তার লেখনীর দ্বারায় সমাজের কল্যাণ হবে । চাঁদাবাজদের পরিচয় চাঁদাবাজ, তারা সাংবাদিক নয় ।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাঈদুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক নাজিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ মারপিটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে । থানা এলাকায় কোন ধরনের চাঁদাবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আসামিদের গ্রেফতার প্রক্রিয়াধীন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি