আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান নিহতের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নাসরাল্লাহকে লক্ষ করে হিজবুল্লাহ’র ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালালে তিনি নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। নাসরাল্লাহ হত্যার নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ হত্যার ঘটনাকে ইসরায়েলের কাপুরুষোচিত এবং সন্ত্রাসী কাজ বলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন-হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়,‘আমরা এই বর্বর ইহুদি আগ্রাসন ও আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ,রীতিনীতি ও সনদের প্রতি অগ্রাহ্যতা প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তিকে প্রকাশ্যে হুমকির অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের নেতারা। সেই সঙ্গে লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ইসলামি প্রতিরোধের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। হাসরাল্লাহ হত্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি ফাতাহ আন্দোলন। এসময় লেবাননের জনগণ এবং তাদের প্রতিরোধ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে ফাতাহ।
ইসরায়েলি হামলাকে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি।এক বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলকে নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি একটি অপরাধ যা দেখায় যে ইহুদি সত্তা সমস্ত লাল রেখা অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে সুদানি নাসরাল্লাহকে “সৎপথের শহিদ” বলে অভিহিত করেছেন। ইরাকজুড়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। প্রভাবশালী ইরাকি শিয়া মুসলিম নেতা মোক্তাদা আল-সদরও ইরাকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
লেবাননে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। ইসরায়েলি হামলাকে তিনি ‘গণহত্যা,দখল এবং আক্রমণে’র অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলকে থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় নাসরাল্লাহের নাম উল্লেখ না করে এরদোয়ান বলেছেন,তুরস্ক লেবাননের জনগণ এবং এর সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। মুসলিম বিশ্বকে আরও “দৃঢ়” অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এরদোয়ান।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা বলেছেন,নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ড তাদের ইসরায়েলি শত্রুদের মোকাবেলা করার সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে। ইসরায়েলি শত্রুকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব কাউন্সিল জানিয়েছে, শহিদ হাসান নাসরাল্লাহ’র আত্মদান ত্যাগের শিখাকে বাড়িয়ে তুলবে।
লেবাননের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক।ইসরায়েলি হামলায় পুরো অঞ্চলটি সহিংসতার এক চূড়ান্ত চক্রে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিকে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা এবং সংঘর্ষ রোধে লেবানন কর্তৃপক্ষ এবং অঞ্চলটির অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছে ফ্রান্স। এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। ফ্রান্সের বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য জাঁ-লুক মেলেঞ্চন বলেছেন, নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড লেবাননে আগ্রাসন এবং সাধারণ যুদ্ধের আরও একটি ধাপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর অপরাধগুলো চলতে থাকবে কারণ তা অপ্রতিহত রয়েছে।
নাসরাল্লাহ হত্যায় ইসরায়েলকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে লেবাননে শত্রুতা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনা লেবানন এবং মধ্যপ্রাচ্যকে আরও বড় নাটকীয় পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রচলিত চর্চা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/২৯ সেপ্টেম্বর-২৪/মওম