কুড়িগ্রামে পেকিং রাজহাঁসের খামার পাল্টে দিয়েছে বেকার যুবকের ভাগ্য

0
126
কুড়িগ্রামে পেকিং রাজহাঁসের খামার পাল্টে দিয়েছে বেকার যুবকের ভাগ্য
কুড়িগ্রামে পেকিং রাজহাঁসের খামার পাল্টে দিয়েছে বেকার যুবকের ভাগ্য
জি এম রাশেদুল ইসলাম:
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বাপ-বেটার পেকিং রাজহাঁস খামার এখন এলাকায় সাঁড়া ফেলে দিয়েছে। সুভ্র সাদা রঙের ঝকঝকে হাঁসগুলো যখন পাখনা মেলে পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুড়ে বেড়ায় তখন মুগ্ধ চোখে হাসঁগুলো দেখেন এলাকাবাসী। খামারের মালিক আব্দুল আজিজ করোনাকালিন সময়ে চাকরী হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তারপর টানাটানির সংসার চালাতে বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। কিন্তু অভাব তাকে যেন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত পেকিং বা স্থানীয়ভাবে বলা বেলজিয়াম রাজহাঁস খামার গড়ে তুলে ভাগ্য ফেরাতে পেরেছেন তিনি। পিতা-পূত্র মিলে গড়ে তোলা খামারের নাম দিয়েছেন বাপ-বেটা খামার। এই খামারের নাম এখন সকলের মুখে মুখে।
আব্দুল আজিজ জানান, অনেক রকমের রাজহাঁস পালন করেছি কিন্তু লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখিনি। পরে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা থেকে পেকিং রাজহাঁস পালন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে আমাকে ৫০টি পেকিং রাজহাঁসের ছানা বিনামূল্যে সরবরাহ করে। বাপ-ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে এখন আমার খামারে ১৫২টি খাবার উপযুক্ত রাজহাঁস আছে। তারা ডিমও দিচ্ছে। একহালি ডিম প্রায় দুশো টাকায় বিক্রি করছি। একটি করে ডিম থেকে ২৮ দিনের মধ্যেই বাচ্চা হয়। সেই বাচ্চা গুলোকে দুই থেকে আড়াই মাস খাবার দিলে খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এসময় তাদের ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতিটি রাজহাঁসের কেজি ৬শ’ টাকা করে। ফলে একটি রাজহাস কিনতে খরচ পরবে ১৫শ’ থেকে আঠারশ’ টাকা।
আব্দুল আজিজের স্ত্রী রোজিনা বেগম জানান, ঘর মেরামত করতে আমাদের দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া খাদ্য, ঔষধ, ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে। আমরা এখন ডিম, বাচ্চা ও বড় হাস বিক্রি করতে পারছি। রাজহাস পালনের জন্য বাড়ীর পিছনে ১৪ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য বিল বন্ধক নিয়েছি। সকালে খাবারের পরে হাসগুলোকে বিলে ছেড়ে দেয়া হয়। দুপুরের খেতে এসে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। সূর্য ডোবার আগে আগে রাজহাসগুলোকে একটা ডাক দিতেই খামারে চলে আসে।
দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত রহেদুল জানায়, করোনার পর বাবার চাকরী চলে যায়। তিনি হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে। তখন থেকে বাবার কাজে আমি সঙ্গি হয়ে যাই। তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আজকে আমরা একটু সুখের মুখ দেখছি। খামারটি চালু হওয়ার পর পারিবারিক খরচ বাদে আমরা মাসে প্রায় পনের হাজার টাকার মতো আয় করছি। আমাদের ইচ্ছে খামারটাকে আরো বড় করার।
রাজারহাটের বেসরকারি সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার সৌরভ সরকার জানান, রাজারহাটে অনেক খামারী রাজহাস পালন করছেন। কিন্তু তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন না। কারণ বাড়তি খাবার দেওয়ার পরও হাসগুলো সেভাবে বৃদ্ধি হয় না। সময়ও বেশিদিন লাগে। বিভিন্ন ভাবে রাজহাসগুলো ক্ষতি হয়। সেদিক থেকে পেকিং রাজহাসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। অল্প খাবারে দ্রুত বাড়ন্ত হয়। খেতেও অত্যন্ত সুস্বাধু। ফলে এই রাজহাস পালনে খামারীরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন।
বেসরকারি সংস্থার রংপুর বিভাগের সমন্বয়কারী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বল্প সময়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন পেকিং রাজহাস পালন এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আলোকিত প্রতিদিন /১১ জুন-২০২৪ /মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here