মুহিবুল্লাহ চৌধুরী ও মোঃ আবু বকর সিদ্দিক:
বান্দরবান জেলা সদরের মধ্যম পাড়া এলাকার তোহ্ জাহ নামক একটি রেস্টুরেন্টে ভাতের আগে মদ খেতে চেয়ে না পেয়ে দোকানের নারী মালিক’কে মারধরের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনে থোয়াই তার সহধর্মিণী ও সাব ইন্সপেটর নিং ওয়াইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন আচরণ স্যোশাল মিডিয়ায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে বান্দরবান জেলায়।
১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে শহরের তোহজাহ রেস্টুরেন্টের ভিতরে এ ঘটনা ঘটে। আহত রেস্টুরেন্টের মালিক তার পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইং অনুষ্ঠানের ২য় দিনে রেস্টুরেন্টে কর্মচারী ছিলোনা। তাই মালিক শৈসাইমং নিজেই তার সহর্ধমিণী উম্যাশৈ ও ৬৫ বছরের বৃদ্ধ মা পাইনুচিং মারমা’কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে কাজ করছিলেন।
এ রেস্টুরেন্টে আগে থেকেই টেবিলে ৭/৮ জন কাস্টমার বসে অপেক্ষা করছিল ভাত খাওয়ার জন্য। এ সময় কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনে থোয়াই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ভাত খাওয়ার আগে মদ খাওয়ার কথা বললে রেস্টুরেন্টের মালিক শৈসাইমং তাদের”কে বলে আমাদের এখানে মদ নেই। এমন বলার পরে রেগে উঠে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনে থোয়াই’র সহধর্মীণি হুমকি দিয়ে বলেন, আমি এসপির বৌ এক্ষুনি মদ এনে দিতে হবে, না হলে বান্দরবান পুলিশ সুপারকে বলে সারাজীবনের জন্য দোকান বন্ধ করে দিবো। এই বলে দোকানে হৈচৈ শুরু করেন তিনি।
পরিচয় জানার পরে রেস্টুরেন্টে মালিকের মা ৬৫ বছর বয়সী মহিলা পাইনুচিং এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনেথোয়াই এর সহধর্মিণীর কাছে কয়েকবার মাফ চায়। তারপর তারা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আবার রেস্টুরেন্টে ঢুকে। পরে দোকানদারদের অনুরোধে আবার বের হয়। এরপর আবারো ৩য় দফায় রেস্টুরেন্টে ঢুকে দোকানের মালিকের উপর হামলা শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের স্ত্রী ও তার সাথে থাকা সাব ইন্সপেক্টর নিং ওয়াই সহ এক যুবক। তারা রেস্টুরেন্টের মালিক শৈসাইমং এর পাশাপাশি তার মহধর্মীনী মালিকের স্ত্রী উম্যাশৈ কে মারধর করে আহত করেন। সে সময় উম্যাশৈ এর কোলে থাকা তাদের এক বছরের শিশুটিও মাটিতে ছিটকে পড়ে আহত হয়।
ঘটনা যখন বাড়তে থাকলে রেস্টুরেন্টের মালিকের মেঝো ভাই খিংসাইমং এসে ঝগড়া মিটাতে গেলে তাকেও ঘুষি মারে এবং বুকের বাম পাশে কামড় বসিয়ে দেয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের স্ত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খবর পেয়ে বান্দরবান সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কিছু না জিজ্ঞেস করেই উল্টো দোকান বন্ধ করে দিয়ে মালিক”কে থানায় নিয়ে যেতে চায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার মোঃ হেলাল। এ ঘটনায় আতংকিত হয়ে থানায় মামলা করার সাহস পায়নি ভুক্তভোগী রেস্টুরেন্টে মালিক।
ঘটনার পর বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে হামলায় আহতরা রেস্টে আছেন রেস্টুরেন্ট মালিক শৈসাইমং তার সহধর্মিণী উম্যাশৈ ও ভাই খিং সাইমং। এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মোঃ দিদার জানান, হামলায় তিনজন আহত হয়েছে তাদের একজনের বুকে দাঁতের কামড়ের চিহ্ন দেখেছি যা জলাতঙ্ক রোগীর টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং তাদের’কে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনে থোয়াই এর অফিসিয়াল সরকারি মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঘটানার বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে ২ পক্ষের বৈঠক হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, হামলাকারীরা হলেন, কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মংনেথোয়াই ও তার সহধর্মিণী এবং সাব ইন্সপেক্টর নিং ওয়াই মার্মাসহ ৩ জন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি দেখছি আমরা।’
আলোকিত প্রতিদিন / ১৮ এপ্রিল-২৪ /মওম
- Advertisement -