মুহাম্মদ জুবাইর:
#ওসি পতেঙ্গা কে ম্যানেজ করলেই সব অপরাধ জায়েজ
#কিশোর গ্যাংদের সাথে গভীর সম্পর্ক পতেঙ্গা থানা পুলিশের
#প্রতিবেদককে মামলায় ফাঁসাতে মরিয়া ওসি কবিরুল ইসলাম
#পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম ৮ হাজার টুরিস্ট পুলিশ ৩ হাজার
চট্টগ্রামকে বলা হয়ে থাকে বানিজ্যিক রাজধানী। দেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র বন্দর থাকায় এ অঞ্চলে ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধাও ভালো। ফলে একটা সময় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা কুমিল্লা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন সীমানাঘেষা অঞ্চলসমূহকে পণ্য চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন সমুদ্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে চট্টগ্রামকে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য চোরাচালান এখন সমুদ্র পথে এই চট্টগ্রাম দিয়েই প্রবেশ করছে।
একাধিক সূত্র ও প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বলছে, নগরের ১৫ নম্বর ঘাট দিয়ে বছরখানেক আগেও বেশী পাচার হত চোরাচালান। বড় বড় লাইটার জাহাজে করে আনা বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর মধ্যে স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স মালামাল, বিদেশী সিগারেট, মদসহ পাচার করার মত সবই হাত বদল হত। এমনকি মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবাও এই রুট দিয়ে পাচার করা হত। তবে রুটটি পরিচিতি পাওয়ায় এবং গেল বছর প্রসাশনের কাছে বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়ায় কারবারিরা বদলে ফেলেছে পরিকল্পনা। আর তাইতো এখন নগরজুড়ে সবচেয়ে বেশী চোরাচালান হচ্ছে খোদ সমুদ্র সৈকত দিয়ে। জানা গেছে, প্রতি মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশী পণ্য এই রুটে চোরাচালান হচ্ছে। ফলে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ পর্যটন কেন্দ্র। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই যেন বদলে যায় এখানকার দৃশ্যপট। ড্রামে ড্রামে করে অনেকটা প্রকাশ্যে পাচার করা হয় চোরাচালান তবে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এই চালানের মধ্যে ইয়াবা, মদসহ অস্ত্র চোরাচালানেরও খবর পাওয়া গেছে ফলে দিন দিন নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলছে ভ্রমন পিপাসুদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এখানে পুলিশ জড়িত। প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ঐ ব্যক্তি আরও বলেন, পুলিশকে না জানিয়ে মোটামুটি এভাবে ওপেন কি করে পণ্য খালাস করবে তারা? পুলিশ ম্যানেজ করেই প্রভাবশালীরা নিরাপদ জোন হিসেবে এই স্থানে এক প্রকার প্রকাশ্যেই চোরাচালান পাচার করছে। বিশেষ করে সন্ধার পর আমরা ছোট ছোট ড্রামে করে চালান লোড আনলোড করতে দেখি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, থানা পুলিশের মাসোয়ারা কালেকশন করে ক্যাশিয়ারের ভূমিকা পালন করেন খোদ স্থানীয় থানারই কাদের নামক এক এসআই। একাধিক ভিডিওতে ঐ এসআইয়ের চাঁদাবাজির সত্যতা মিলেছে, এমনকি চোরাকারবারিদের সাথে তার সখ্যতারও প্রমান পাওয়া গেছে। যদিও অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলে বিষয়টি তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেই উড়িয়ে দেন।
অন্যদিকে ইতোমধ্যে প্রতিবেদকের হাতে এসেছে বেশ কয়েকটি ভিডিও, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লাইটার জাহাজ থেকে স্পীড বোটে করে আনা সেই চোরাচালানের পণ্য গুলো লেবার দিয়ে পাচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আনলোডের পর ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে করে প্রথমে নেওয়া হয় পতেঙ্গা থানার ফুলছড়ি পাড়াতে পরে একে একে পাচার করা হয় দেশের সবখানে। এদিকে সমুদ্র পাড়ে সরকারের স্থাপনা ধ্বংস করে বসানো হয়েছে প্রায় চারশরও বেশি দোকান এসব দোকান থেকে চাঁদা তুলতে বিশাল এক গ্যাং তৈরি করেছেন ওসি কবিরুল ইসলাম এবং টুরিস্ট পুলিশ। অবৈধ স্থাপনা দোকান থেকে দৈনিক ওসি কবিরুল ইসলামকে দিতে হয় ৮ হাজার টাকা, টুরিস্ট পুলিশকে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা না দিলে থাকবেনা একটি দোকানও ওসি কবিরুল ইসলাম কথায় কথায় বলে থাকেন এই এলাকায় কাউকে খাওয়ার টাইম নেই আমার রাজত্ব চলবে চলছে!
চোরাচালানের নেপথ্যে কারা?
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, পতেঙ্গা জোনে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন মূসা প্রকাশ সোর্স মূসা নামক এক ব্যক্তি। সূত্র বলছে, একটা সময় সোর্স মূসা ছিলেন বাদাম বেপারী। লাল গামছা গলায় ঝুলিয়ে বীচের ধারে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করলেও এখন সেই তিনিই কোটিপতি। তার রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার পিছনে আলাদ্দিনের চেরাগ হিসেবে মূলত কাজ করেছে এই চোরাচালান। এই সোর্স মুসাকে সরাসরি সেন্টার দিচ্ছে কথিত নেতা এবং প্রশাসন,যদিও পুলিশের সোর্স হিসেবেও তার নাম ডাক আছে। অভিযোগ উঠেছে, মদ, জ্বালানী তেল, স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স মালামাল এমনকি অস্ত্র চোরাচালানেও এই সমুদ্র পথে মূসার হাত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য আছে। চালান আসার আগে এদের কেউ নিরাপত্তার কাজ করে কেউবা আবার লোড আনলোডের সময় ঝামেলা হলে হেন্ডেল করে। পণ্য খালাসের পর তাদের দলের একজন আবার সেগুলো নিয়ে সেভ জোন ফুলছড়ি পাড়ায় পৌছে দেয়। এভাবেই গেল প্রায় বছর দেড় বছরের মধ্যে পতেঙ্গা জোনে গড়ে উঠেছে সোর্স মূসার মাদকসহ অবৈধ চোরাচালানের সম্রাজ্য।
চট্টগ্রাম নগরীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত অন্যতম। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্য্য বাড়াতে এবং এই স্পটটি আকর্ষনীয় করে তুলতে সরকার গত কয়েক বছরে বদলে ফেলেছে পরিবেশ। অথচ চোরাকারবারিদের দৌড়াত্মের ফলে একদিকে যেমন ভ্রমন পিপাসুদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হচ্ছে আবার ঠিক তেমনিই সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই সুবিশাল সমুদ্র সৈকতটির। আর তাই স্থানীয় এলাকাবাসী এবং সচেতনের দাবী, প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই যেন তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। যাতে করে তারা আবারও একটি সুন্দর নিরাপদ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পান।
আলোকিত প্রতিদিন/২৮ ফেব্রুয়ারি-২৪/মওম