[bangla_time] | [bangla_day] | [bangla_date] | [english_date] | [hijri_date]

বেকারত্ব দূরীকরণে নতুন সম্ভাবনা কারিগরি শিক্ষা

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

জাহিদ হাসান হৃদয়:

বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতায় এগিয়ে চলার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তরুণ প্রজন্মকে এখনই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য দরকার রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও জ্ঞানভিত্তিক গুণগত কারিগরি শিক্ষার প্রচার-প্রচারণা, যার আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করবে, যা সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাসী কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। কারিগরি জ্ঞানার্জনের ফলে তরুণরা নীতি-নৈতিকতা, দক্ষতা, কর্মক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজেকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে দেশে দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য গ্রাজুয়েট বের হলেও তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এদিকে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক জরিপে উঠে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই বেকার। ফলে চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থান কম থাকায় শিক্ষিতদের বড় একটি অংশ হতাশায় ভুগছেন। অনেকে আবার আত্মহননের মতো ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চাকরির বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। চাকরির বাজারে যে চাহিদা রয়েছে, সে রকম লোক আমরা তৈরি করতে পারছি না। আবার প্রতিবছর যেসব শিক্ষিত লোক চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের উপযোগী চাকরি নেই। গত ১০ বছরে দেশে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী শহর ও শোভন কাজ করতে চান। কিন্তু শহরে যত চাকরিপ্রার্থী প্রতি বছর তৈরি হচ্ছে, সেই পরিমাণ চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। তবে শুধুমাত্র গ্রাজুয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার দিকেই মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে জনগণকে জনশক্তিতে রূপ দিতে সম্ভাবনা বাড়ছে দেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায়। কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকদের দক্ষতা নিশ্চিত করতে সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রকল্পও শুরু করেছে সরকার। এদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্ম বাজারের উপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষাকে সুলভ ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে সরকার। দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক দক্ষতা দেওয়ার জন্য শিক্ষাক্রমে কারিগরি কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কার্যকর পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে যার ফলে এ খাতে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ জনগণের নিকট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি এ শিক্ষা নিয়ে নিবিরভাবে কাজ করা সরককারি-বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থা মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বাড়াতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন শিল্প-কারখানা ও ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা নীতি, কারিকুলাম প্রণয়ন ও জব ম্যাচিং করে কারিগরি শিক্ষাকে আরও কর্মমুখী করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিপিআই পলিটেকনিকের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগীয় প্রধান মুরসালিন ইসলামের সাথে কথা হয় আলোকিত প্রতিদিনের। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন সিপিআই পলিটেকনিক প্রধান লক্ষ্য হলো দক্ষতা ও শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা। জনগণকে জনশক্তিতে রূপ দিতে কাজ করছে সিপিআই পলিটেকনিক। আমরা আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন আমরা চাই তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। সিপিআই পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য দক্ষ শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছে এবং ব্যবহারিক কাজ করার জন্য রয়েছে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ল্যাব। তারা চাইলে ঐখানে যখন ইচ্ছা কাজ করতে পারবে। যাতে তারা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারে এবং দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। এদিকে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, দেশের কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রকল্পের প্রয়োজন। তাহলে একটা পরিবর্তন আসবে। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন প্রাথমিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে, আশা করি নির্ধারিত সময়ের মাঝেই এ প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে। শিক্ষকদেও পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সুতরাং অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন তারা। আমরা আশা করছি, শিক্ষার্থীদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠবে কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি অঙ্গনে একটি ইউনিক ফিচার দাঁড় করাতে সক্ষম হবো। এছাড়া কারিগরি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় সম্পৃক্ত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

আলোকিত প্রতিদিন/০৯ সেপ্টেম্বর ২৩/মওম
- Advertisement -
- Advertisement -