আলোকিত ডেস্ক:
মানবজমিন অফিস ঘুরে গেলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ট্রেড মার্ক হাসি আর আতিথেয়তায় কাটিয়ে গেলেন পাক্কা দু’ঘণ্টা। গণমাধ্যম এবং গণতন্ত্রের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিলেন আরও একবার। প্রস্তুতি ছিল সকাল থেকেই। নির্ধারিত সময়ের মিনিট দু’য়েক আগেই কাওরান বাজারের মানবজমিন কার্যালয়ে আসেন মার্কিন দূত। তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নেন মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী এবং সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী। এ সময় তিনি মানবজমিন-এর বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। পরে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বস্তুনিষ্ট গণমাধ্যম হিসেবে মানবজমিন-এর অবস্থান তুলে ধরেন। বলেন, জনগণের কণ্ঠস্বর যাতে শোনা যায় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিদিন লড়াই করছি। এ সময় পিটার হাস বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান র্ব্যক্ত করেন। বলেন, বিধিনিষেধ এবং ঝুঁকির কারণে গণমাধ্যমের সদস্যরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হন- তা কল্পনা করাও আমার জন্য কঠিন। মানবজমিন কার্যালয় পরির্দশনের শুরুতেই পিটার হাস নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন। দেশ-বিদেশের ঘটনাগুলো মানবজমিন কীভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কভার করে সেই গল্প শোনেন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরীর কাছ থেকে। মানবজমিন-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কেএম বাবর আশরাফুল হক এবং মার্কিন দূতাবাসের প্রেস সেকশনের প্রধান ব্রায়ান শিলার প্রাণবন্ত সেই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাখানেকের সেই আড্ডা শেষে গোটা মানবজমিন অফিস ঘুরে দেখেন রাষ্ট্রদূত। পরিদর্শনকালে পিটার হাস স্কুলজীবনে সংবাদপত্র বিপণনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার গল্প বলেন। পিটার বলেন, স্কুল জীবনে আমি সংবাদপত্র বিলি করতাম। এটা আমার শৈশবের একটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি বটে। যদিও কাজটা কঠিন ছিল। আসলে লেখাপড়ার ব্যয় মেটানোর জন্য আমি কাজটি করতাম। খবরের কাগজ বিলি করার মধ্য দিয়েই মূলত সংবাদপত্রের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা। পরে সবার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক পর্বে মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে সম্পাদক ও প্রকাশক মাহবুবা চৌধুরীসহ মানবজমিন পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মানবজমিন কার্যালয়ে আপনার এই সফর আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার দৃঢ় বন্ধন এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যম যে মৌলিক ভূমিকা পালন করে তার উজ্জ্বল এক প্রতীক। আমরা সম্পর্কের চর্চায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের দুই দেশের বিকাশ এবং সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে এমন আলোচনায় যুক্ত হতে চাই। মতিউর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন কোনো ধরনের অনিয়ম ছাড়াই অনুষ্ঠিত হওয়া এখন বাংলাদেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমের গুরুত্ব উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে এটি ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনগুলো আমাদেরকে নিশ্চুপ করে দেয়ার চেষ্টা করছে এবং জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনকে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে। জনগণের কণ্ঠস্বর যাতে শোনা যায় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিদিন লড়াই করছি। আমরা একা নই এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। পরে পিটার হাস মানবজমিন পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, বিধিনিষেধ এবং ঝুঁকির কারণে গণমাধ্যমের সদস্যরা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তা কল্পনা করাও আমার জন্য কঠিন। এসব ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বেশ সহজ। আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত নীতিগুলোর পক্ষে অবস্থান করছি। বাংলাদেশও এ নীতির পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। পাশাপাশি কোনো ধরনের প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই যেকোনো অন্যায় নিয়ে কথা বলার ক্ষমতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রাষ্ট্রদূতের মানবজমিন কার্যালয় পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন্স এডভাইজার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রেস টিমের লিড ও প্রেস স্পেশালিস্ট রিকি সালমিনা, মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাহাদি আল হাসনাত এবং সুমাইয়া আরেফিন অর্নি তার সঙ্গে ছিলেন।
সূত্র: মানবজমিন