[bangla_time] | [bangla_day] | [bangla_date] | [english_date] | [hijri_date]

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম আদিবাসী শহীদ চিত্তরঞ্জন কার্বারীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ও কিছু কথা

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

:: আবু সায়েম::
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী খাগড়াছড়ির প্রথম শহীদ চিত্তরঞ্জন কার্বারীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । ১৯৭১ সালের ১৩ মে’র এই দিনে পাকিস্তানের পাক হানাদার বাহিনী দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থানা আওয়ামীলীগের সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সংগঠক শিক্ষক, সমাজসেবক, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জ্ঞানী ও জনপ্রতিনিধি চিত্ত রঞ্জন কার্বারীকে মহালছড়ির নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। হানাদার বাহিনীরা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার পরিবারের উপর চালিয়েছিল নির্মম নির্যাতন।
সেদিনের এ নির্মম হত্যাকান্ড, অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো স্মৃতিচারণ করছিলেন শহীদ চিত্ত রঞ্জন কার্বারীর নাতি কক্সবাজার জেলা কারাগারের সাবেক জেলার ও মাগুরা কারাগারের বর্তমান জেলার রীতেশ চাকমা। তিনি জানান, আমার নানা শহীদ চিত্ত রঞ্জন কার্বারী স্বাধীনতার স্বপক্ষে বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। দেশ স্বাধীন করার জন্য তিনি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে পরিবারের মায়া ত্যাগ করতে পিছপা হননি।
১৯৭১ সালের ১৩ মে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এ দেশের স্বাধীনতা বিরোধী দালালদের সহযোগিতায় মহালছড়ি থানা আওয়ামীলীগের সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সংগঠক জনপ্রতিনিধি চিত্ত রঞ্জন কার্বারীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে যখন তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য জন্য যখন অনুরোধ করেছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও আমি পালিয়ে যাবো না, যদি আমি পালিয়ে যায় তবে একজন সাহসী এবং দেশপ্রেমিকের পরাজয় হবে এবং তোমাদের উপর নেমে আসবে অত্যাচার ও হত্যার মতো জঘন্য কর্মকান্ড।’ সেদিন কিন্তু তিনি পালিয়ে যাননি। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করার সূচনা, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
হানাদার বাহিনীরা শহীদ চিত্তরঞ্জন কার্বারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে মহালছড়ি নামক স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তার পরিবারের উপর চালিয়েছিল নির্যাতনের স্টিমরোলার। শারীরিকও মানসিকভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তার পরিবার।
দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী দালাল এবং পাকিস্তানি ঘাতকরা তার পরিবারকে ধ্বংস করার পায়তারা চালিয়েছিলো। কিন্তু সেদিন শহীদ চিত্তরঞ্জন কার্বারীর সহধর্মিনী বিরঙ্গনা চাকমার বুদ্ধিমত্তা সাহসিকতার কারণে পালিয়ে গিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কোন রকম জীবন রক্ষা পেয়েছিলো।
সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে তটস্থ হয়ে শহীদ পরিবারকে কোন রকম সাহায্য ও আশ্রয় দেয়নি। দিনের পর দিন অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়ে অন্য কোন এক গ্রামে শহীদ চিত্ত রঞ্জন কার্বারীর ছেলে মেয়ে এবং তার বড় মেয়ের ছোট ছোট বাচ্চা নাতিদের নিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আত্নীয়ের বাড়িতে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
১৯৭১ সালের ১৩ মে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে সারা বাংলাদেশে যে কজন আদিবাসী শহীদ হয়েছিলো তাদের মধ্যে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির চিত্ত রঞ্জন কার্বারী অন্যতম। জেলার রীতেশ চাকমা তার শহীদ নানা সম্পর্কে আরো জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবারকে ১০০০ টাকা অনুদান দিয়েছিল। তিনি আরও জানান, আমার নানা চিত্ত রঞ্জন কার্বারী সাহসী দেশপ্রেমিক এবং আপাদমস্তক একজন বীর ছিলেন। সেদিন কিন্তু তিনি পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারতেন! কিন্তু তিনি তা করেননি,নিজের জীবন দিয়ে স্বাধীনতার সূচনা করেছেন।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসন ভবনের সামনে ১৯৭১ সালের আদিবাসী শহীদদের যে কজন শহীদ হয়েছিলো তাদের সম্মান জানিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা আসার পর শহীদদের সম্মানার্থে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছেন।
শহীদ চিত্ত রঞ্জন কার্বারী একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। ৩০ লক্ষ শহীদএবং ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের মধ্যে আদিবাসীদের শহীদের আত্নত্যাগের কথা জাতি কোন দিন ভুলবে না। আপনাদের আত্নত্যাগ যতো দিন বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে যতো পদ্মা নদী প্রবহমান থাকবে আপনাদের জীবন বিসর্জন জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি প্রশাসনের ভবনের সামনে স্মৃতিস্তম্ভের নামফলকে এখনো লিপিবদ্ধ আছে-
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ছন্দে বলতে গেলে সত্যি আপনারা মহান, জাতি দেশ এবং মানবজাতি আপনাদের অবদান আত্নত্যাগ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন। আমরা তোমাদের ভূলবো না।
সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা নিরন্তর। সৃষ্টিকর্তা আপনাদের শান্তিতে রাখুন।

- Advertisement -
- Advertisement -