বুয়েটের যাযাবর-৯৭ ব্যাচের তৈরি ভাইরাস নিস্ক্রিয়করণ চেম্বার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে

0
445

::নিজস্ব প্রতিবেদক ::
স্বাস্থ্যখাতে সেবাদানকারীদের কভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা যখন হাজার ছাড়িয়েছে, তখন তাদের সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে বুয়েটের ‘যাযাবর-৯৭’ ব্যাচ। বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠনের সদস্য প্রকৌশলী, স্থাপত্যবিদ এবং পরিকল্পনাবিদরা করোনা হাসপাতালগুলোর ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় তৈরি করেছে ভাইরাস নিস্ক্রিয়করণ চেম্বার। চেম্বারটি আজ শুক্রবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আরেকটি কিছু দিনের মধ্যেই স্থাপন সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়েছে। ‘যাযাবর-৯৭’ ব্যাচের দাবি, ‘প্রায় পনের দিনের প্রচেষ্টায় চিকিৎসকদের জন্য এটাই দেশের প্রথম ডিসইনফেকশান চেম্বার যা ডব্লিউএইচও এবং সিডিসি নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি।’
জানা যায়, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক ‘যাযাবর-৯৭ ব্যাচ’ এর এই ভাইরাস নিস্ক্রিয়করণ রোবাস্ট ডিসইনফেকশান চেম্বার তৈরির পরিকল্পনায় আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা দিলে অধ্যাপক এবিএম তৌফিক হাসানের তত্বাবধানে বুয়েটের মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে শুরু হয় হাইড্রলিক্স ডিজাইনের প্রটোটাইপ এবং অন্যদিকে বে ডেভেলপমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের তত্বাবধানে ওয়ার্কশপে চলতে থাকে চেম্বার এর স্ট্রাকচার বানানোর কাজ। বিসিএল ফ্লুইড সিস্টেমের সরবরাহকৃত পাম্প এবং সামুদা ক্যামিক্যালের সৌজন্যে পাওয়া যায় ডিসইনফেক্টেন্ট। এরই মধ্যে বিভিন্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং তাদের মুল্যবান মতামত নেয়া হয়। এভাবেই সকলের সহযোগিতায় প্রায় পনের দিনের নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি হয় চেম্বারটি।
যাযাবর’৯৭ সদস্য রাজউক ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বাংলাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যখন ভয়াবহতা সৃষ্টি করতে শুরু করলো, একের পর এক ডাক্তার, নার্স আক্রান্ত হতে শুরু করলো, তখন যাযাবর’৯৭ তাদেরকে বাঁচাতে নানা সহযোগিতার পাশাপাশি এই ভাইরাস মুক্তকরণ চেম্বারটি তৈরির কথা ভাবতে শুরু করে। সেই ভাবনাটিই পরবর্তী রূপ নেয় রোবাস্ট ডিসইনফেকশান চেম্বার তৈরির পরিকল্পনায়। এর আগে যাযাবর’৯৭ এর উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে আসছিলেন তারা।
জানা যায়, যাযাবর’৯৭ এর কয়েকজন সদস্য বিশেষ করে আইডবিøউএম এর হেড অফ বিজনেস স্ট্রাটেজি এম সামিয়ুন নবীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. এবিএম তৌফিক হাসান ও বে ডেভেলপমেন্ট লি. এর প্রধান প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে, শাহজালাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্থপতি ইফতেখার রহমানের করা ডিজাইনে, রাজউক ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার সাইদুর রহমান কায়েস, প্রকৌশলী বখতিয়ার রহমান, সিটি ব্যাংকের ইভিপি ও ক্লাস্টার হেড প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, প্রকৌশলী আরিফ ইফতেখার, প্রকৌশলী সাদী খান এবং প্রকৌশলী খান জুবায়ের সাইমনের সার্বিক সহযোগিতায় করোনারোগীদের সেবা প্রদানকারী হাসপাতালগুলোর ফ্রন্ট লাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য এই রোবাস্ট ডিসইনফেকশান চেম্বার বানানোর পরিকল্পনা গ্রহন করে। পরবর্তীতে আরেক যাযাযাবর সুমন মোহাম্মাদ মোয়াজ্জেম হোসাইনের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক তাদের এই পরিকল্পনার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে আর্থিক ভাবে সহযোগিতার ঘোষণা দিলে অধ্যাপক এবিএম তৌফিক হাসানের তত্বাবধানে বুয়েটের মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে শুরু হয় হাইড্রলিক্স ডিজাইনের প্রটোটাইপ এবং অন্যদিকে বে ডেভেলপমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের তত্বাবধানে ওয়ার্কশপে চলতে থাকে চেম্বারের স্ট্রাকচার বানানোর কাজ। বিসিএল ফ্লুইড সিস্টেম এর সরবরাহকৃত পাম্প এবং সামুদা ক্যামিক্যালের সৌজন্যে পাওয়া যায় ডিসইনফেক্টেন্ট। এরই বিভিন্ন্য ডক্টরদের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তাদের মূল্যবান মতামত নেয়া হয়। আলাদা করে বলতে হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালের ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ এবং কুয়েত মৈত্রী হসপিটালের ডাইরেক্টর ডা. এ কে এম সারোয়ারুল আলম, হেড অফ আইসিইউ ডক্টর আসাদ, ডক্টর রহিম এবং ডক্টর ইব্রাহিমের নাম। এদিকে, সামিউন নবীর ব্যবস্থাপনায় অন্য সদস্যদের মাধ্যমে চলতে থাকে ম্যাটেরিয়াল সোরসিং এর কাজ, কেউ বা করতে থাকে ইলেকাট্রিক্যাল কন্ট্রোল প্যানেল এবং অটোমেশন ডিজাইনের কাজ ইত্যাদি। এভাবেই সকলের সহযোগিতায় প্রায় পনের দিনের নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি হয় ডক্টরদের জন্য দেশের প্রথম ডিসইনফেকশান চেম্বার।
যাযাবর’৯৭ এর দাবি, ‘চেম্বারটি সম্পূর্ণ স্থানীয় ভাবে সংগৃহীত মালামাল দ্বারা প্রস্তুত, ডব্লিউএইচও এবং সিডিসির নির্দেশনা মেনে তৈরি, এখানে পাম্প ব্যবহার করে ডিসইনফেক্টেন্টের মিশ্রনে তৈরি করা হয়েছে বলে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, অটোমেটিক হওয়ায় ব্যবহারকারীদের সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি নেই।
যাযাবর’৯৭ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা স্থানীয় ভাবে বানানোর কারনে সরকারের আমদানি ব্যয় নেই এবং দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমদানির তুলনায় এটা তৈরি করতে খরচ অনেক কম। ফলে দেশে এই চেম্বার বানিয়ে খুব সহজেই স্বাস্থ্যখাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব।
যাযাবর’৯৭ এর সদস্যদের আশা, এই চেম্বারটি করোনা যুদ্ধের ফারস্ট লাইন অফ ডিফেন্স, আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ডক্টরদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। উক্ত যাযাবর সদস্যগণ আরো একটি চেম্বার আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালে সরবরাহ করবেন।
যাযাবর’৯৭ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, বুয়েট ব্যাচ’৯৭ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন যাযাবর সদস্যদের নিকট থেকে ফান্ড রেইজ করছে। সেই ফান্ড থেকে বিভিন্ন দুস্থ ও মধ্যবিত্ত অসহায় পরিবারের মধ্যে তা বিতরণ করছেন তানজিনা সারমীন ও কায়েস রহমান।
বুয়েট এর এই সাবেক শিক্ষার্থীরা মনে করেন, শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমাদের উচিত যার যা কিছু বুদ্ধি ও দক্ষতা আছে, তাই দিয়ে এই করোনা-যুদ্ধে সামনে এগিয়ে আসা। যাযাবর ৯৭ আশা করেন, এই উদ্যোগ দেখে অন্যরাও উৎসাহ পাবেন এবং এরকম কাজে এগিয়ে আসবেন। দেশের বিত্তবান এবং কর্পোরেট হাউজরা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসলে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সকল করোনা হাসপাতাল এর জন্য খুব কম সময়ে উক্ত জীবানু মক্তকরন চেম্বারটি তৈরি করে সরবরাহ করা যাবে। তারা বলেন, সবার এরকম সমন্বিত উদ্যোগ মিলেই আমরা ইনশাআল্লাহ জিতে যাবো এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here