:: প্রতিবেদন, রয়টার্স ::
জনসম্মুখে দু’সপ্তাহ ধরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের অনুপস্থিতি এবং তার অসুস্থতা নিয়ে যে সব খবর পাওয়া যাচ্ছে সে ব্যাপারে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চুপ থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র জল্পনা দেখা দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া থেকে সরাসরি কোনো খবর না মেলায় ভাসা ভাসা কিছু খবর এবং স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর থেকে নানারকম জল্পনা ডালপালা মেলছে। শোনা যাচ্ছে নানা কথা।
পায়ের গোড়ালিতে সামান্য আঘাত পাওয়া থেকে ধীরে ধীরে কিম সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন জল্পনা থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর তার ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়া, চিকিৎসা করতে আসা কোনো চীনা ডাক্তারের কাছ থেকে কিমের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া এমনকী তিনি মানসিকভাবে অবসন্ন হয়ে পড়েছেন, অচেতন হয়ে আছেন, কোমায় চলে গেছেন এবং মারা গেছেন বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ম্যসেজিং অ্যাপ-এ এও বলা হচ্ছে যে, ফরাসি ডাক্তাররা কিমকে কোমা থেকে বের করে আনতে পারেননি। এ অবস্থায় দেশটির ক্ষমতা দখল করেছেন কিম জং উনের চাচা কিম পিয়ং ইল।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার অবশ্য এইসব অনিশ্চিত খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমগুলো বেশির ভাগ খবরকেই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে খবরগুলো একেবারে ভুয়া বলে নাকচও করা যাচ্ছে না। কারণ, উত্তর কোরিয়া এত কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখে যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কিমের ঘনিষ্ঠমহলের ভেতরের খবর জানতে পারে না।
গত ১১ এপ্রিলে একটি পলিটব্যুরো বৈঠকে কিম জং-উনকে সর্বশেষ সভাপতিত্ব করতে দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার কোনও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেই তার ছবি দেখা যায়নি বা ভাষণ প্রকাশিত হয়নি। তার শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েও পিয়ংইয়ংয়ের কোনো সংবাদমাধ্যম মুখ খোলেনি। গত ১৪ এপ্রিল কিমকে তার দাদা কিম ইল-সাং এর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি। তখন থেকেই কিমের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে ‘কিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে পারে’ বলে গুঞ্জন উঠে। দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট এনকের খবরেও ১২ এপ্রিলে কিম জং-উনের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে বলা হয়। এ অস্ত্রোপচারের পর কিমের গুরুতর অসুস্থতার খবরে শোরগোল পড়ে যায়।
কিম সত্যিই গুরুতর অসুস্থ? নাকি রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে কিছুটা দূরের কোনও শহরে? এমন জল্পনা নতুন মাত্রা পায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের বিশেষ ট্রেনকে রিসর্ট শহর উনসানের একটি স্টেশনে ২১ এবং ২৩ এপ্রিলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। স্যাটেলাইটের ছবিতে তা ধরা পড়েছে বলে দাবি করে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উত্তর কোরিয়া পর্যবেক্ষণ সংগঠন ‘থার্টিএইট নর্থ’।
কিম ও তার পরিবারের সদস্যরা যাওয়া-আসা করেন এই বিশেষ ট্রেনে। কিন্তু সেই ট্রেনে কিম ছিলেন কি না বা তিনি উনসানেই আছেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এরপর শনিবারই সামনে আসে কিম জংয়ের ‘মৃত্যুসংবাদ’। যুক্তরাষ্ট্রের টিএমজেড ট্যাবলয়েড নিউজ ওয়েবসাইট জানায়, “উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর মারা গেছেন।” হংকংয়ের একটি টিভি চ্যানেলও কিমের মৃত্যুর খবর প্রচার করেছে বলে শোনা গেছে।
কিমের মৃত্যুর খবর নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা এমন খবরের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা বলছে, উপগ্রহের ছবিতে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, কিমের বিশেষ ট্রেন গত কয়েকদিনে রিসর্ট শহরে গেছে।
‘লিডারশিপ স্টেশন’ এ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিম তাতে আছেন বা তা থেকে ওঠা-নামা করেছেন সেটি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এমনকী তার শরীর-স্বাস্থ্যের কথা বলা না গেলেও কিম উনসানে থাকতে পারেন বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, এ থেকে সে ধারণা অমূলক বলে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।
কিমকে নিয়ে নিশ্চুপ উত্তর কোরিয়া, বাড়ছে জল্পনা
-Advertisement-
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -