আজ বুধবার, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি*র অভিযোগ!

আরো খবর

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক: অসাধুদের অনিয়ম দুর্নীতির ভারে ডুবছে জুলাই বিপ্লব। সেবাশুন্য হয়ে পড়েছে ডিপিডিসি। ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি নামে বেনামে অঢেল সম্পদের পাহাড়। রাজধানী ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র মুগদাপাড়া ডিপিডিসিতে কর্মরত কেউ বিশ্বাস করতে নারাজ,জুলাই বিপ্লবীদের অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্চতার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। নতুন বাংলা বিনির্মানে সরকার কাজ করলেও ডিপিডিসি মুগদাপাড়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরদের মতো অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে নানা ভাবে সরকার সমালোচিত হচ্ছে। অরাজনৈতিক সরকার সততা নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি জনগণের বিশ্বাসের ঘরে জায়গা করতে পারেনি।

ডিপিডিসি বিগত সরকারের আমলে যেমন চলেছে এখনো তেমনি চলছে। টানা দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, এখানে সেবা পেতে হলে দরকার টাকা, বিনা টাকায় সেবা চিন্তা করা যায় না। আবেদনের পর একটি আবাসিক মিটারের বিপরীতে একজন গ্রাহককে খরচ করতে হয় ৮০ হাজার থেকে একলাখ টাকা। একটি সাধারণ বানিজ্যিক মিটারের জন্য খরচ করতে হয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। মুগদাপাড়া ডিপিডিসির আওতাধীন চোরাই লাইনগুলো চলে অফিসের মর্জির ওপর। চোরাই লাইনে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে যে বিদ্যুৎ ঘাটতি হয় তার দায়ভার কর্তৃপক্ষকে বহণ করতে হয়। অথচ লাভের অংশটি ভাগবাটোরা করে নেয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিরা। নাম গোপন রাখার শর্তে মুগদা ডিপিডিসির একটি সূত্র জানান, বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিমাসে ৮০ লাখ টাকা বাড়তি আয় আসে। উপরি ইনকামের একটি মোটা অংশ চলে যায় উপরে, বাকি অংশের বেশিটা পায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর, পদ অনুসারে হয় টাকা বন্টন।

গ্রাহক সেজে একটি মিটারে আবাসিক সংযোগ পেতে মোট কত টাকা খরচ হয় এমন প্রশ্নে উত্তরে, ডিপিডিসি মুগদপাড়া শাখার সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, সঠিক ভাবে আমি বলতে পারবো না। হিসাব রক্ষকের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদুল জানান, কিসের বিপ্লব টিপ্লব, আমরা যা করবো সেটা হবে। সরকার আবার কারা, আমরাই তো সরকার। উল্টো প্রশ্নছুড়ে বলেন, সরকারি লোক না হলে কি চেয়ারে বসেছি। তিনি আরও জানান, চেয়ার পেতে ঘাটে ঘাটে টাকা ব্যয় করতে হয়, নতুন বাংলা হবে না পুরান বাংলা হবে এটা আমার জানার বিষয় না। সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে, অনেকটা ক্ষেপে গিয়ে রাশেদুল হক বলেন, সেবা দিচ্ছি না তো অফিস কি এমনি চলছে না কি? একটি গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছেন, স্বল্প সময়ে সহকারি প্রকৌশলী রাশেদুল হক নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার সহায় সম্পদের মালিক হয়েছেন। মুগদাপাড়া ডিপিডিসির কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরকে। অফিসিয়াল মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা কল রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েকদিন ধরে অফিসে গেলেও এই কর্মকর্তার পিও পরিচয়ে তামজিম জানান স্যার অফিসের বাহিরে আছেন আবার কখনো জানান, স্যার মিটিংএ আছেন।

ডিপিডিসি মুগদাপাড়া বিশেষ সূত্রে জানা গেছে নির্বাহী স্যার সাংবাদিক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। অবশেষে পাওয়া গেলো নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরকে, অনিয়মের বিষয়ে জানানো হলে এই কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার অর্জিত অবৈধ সম্পদের বিষয় জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা অনেকটাই চুপ থাকেন। ডিপিডিসির অনিয়ম দূর্নীতির শীর্ষে কোটি কোটি টাকা লুটের সাথে জড়িয়ে পড়া নির্বাহী প্রকৌশলী তালিকার সাত মহারতির অন্যতম আবুল মনসুর। অভিযোগের অন্ত নেই ডিপিডিসি মুগদাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে- কর্মজীবনের ২২ বছরে হয়েছেন নামে বেনামে বিপুল সহায় সম্পদের মালিক। যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন সেখানেই গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে অর্থের লোভে দেশের বিরুদ্ধেও কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, আবুল মনসুর রং পাল্টিয়ে সব সময়েই সরকারের সুবিধাভোগী চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে যোগ্য ঠিকাদারের পরিবর্তে অযোগ্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে হাতিয়ে নেন বিপুল টাকা। অভিযোগে আরও জানা যায়, গ্রাহকদের সঙ্গে অসদাচরণ, হয়রানি এবং নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে করে নানা টালবাহানা। ঘুষ না দিলে মিলে না বিদ্যুৎ সংযোগ। শুধু তাই নয়, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কিস্তি করাতে গেলে সেখানেও তিনি উৎকোচ দাবি করার অভিযোগ রয়েছে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে নামে বেনামে আবুল মনসুর কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। রাজধানী ঢাকার অভিজাত পল্লীতে নামে বেনামে ক্রয় করেছেন অঢেল সম্পদ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল আবাসন। ফুটপাত থেকে বড় ভাইকে তুলে এনে বানিয়েছেন শিল্পপতি। বেনামে বিদেশে পাচার করেছেন কোটি কোটি টাকা।

নিজ ছত্রছায়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে এই কর্মকর্তা। স্ত্রীর নামে দিয়েছেন ফ্ল্যাট, চলেন দামি প্রাইভেট গাড়ি হাকিয়ে। ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকা আবুল মনসুরদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আবুল মনসুরের দুর্নীতির ভীত অনেক শক্ত মজবুত হবার কারণে সহজে তার বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবুল মনসুর বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার মতো দায়িত্বশীল ব্যাক্তির নিকটতম আত্মীয় পরিচয় দেয়ার কারণে তার সকল অপরাধ অনিয়ম হালাল করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। বিগত সময়ের কথা, এসব কর্মকর্তারা ডিপিডিসিতে অনিয়ম দুর্নীতি করলে শাস্তি হয়নি। স্বৈরাচার সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, যা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পরিপন্থি এবং শহীদদের সঙ্গে চরম প্রতারণা।

দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ডিপিডিসির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ, দুর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা, শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও লোপাটকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেন ডিপিডিসির গ্রাহক ও সাধারণ মানুষেরা। সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠান আবুল মনসুরদের কারণে বিদ্যুৎ খাত, লোকসানের ভারে নুয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খোদ বাজেটের টাকা বিনোয়োগ করে চলছে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ সেক্টর। তবুও পিছু ছাড়ছে না বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আবুল মনসুরের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি। দেশ জাতির স্বার্থে আবুল মনসুরের নামে বেনামে অনিয়মে অর্জিত সম্পদের ব্যাংক হিসাব তলব করে তদন্ত করলে সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে। অসাধু কর্মকর্তা মুগদাপাড়া ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বিদ্যুৎ গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করার দাবি তোলেন ভুক্তভোগীরা। ইঞ্জিনিয়ার আবুল মনসুরের সাথে এ প্রতিবেদক সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সংবাদটি সম্পুর্ন সত্য নয়।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -