আজ বুধবার, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৭ ডিসেম্বরের পর সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল : ইসি আনোয়ারুল!

আরো খবর

বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা ৭ ডিসেম্বরের পর যেকোন দিন করা হবে বলে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগের ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের ৭ তারিখের পরে যেকোন দিন ঘোষণা হতে পারে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।

গণমাধ্যমে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার দিন-তারিখের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরবর্তী কমিশন সভায়। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দিতে সারাদেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কি হবে, সেটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সবক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। কমিশন মনে করে-সত্যি সত্যিই একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বাসসকে বলেন, যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের জন্য ইসি শতভাগ প্রস্তুত। এ দুটি ভোট ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে, রমজানের আগে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে একসঙ্গে ভোট নেওয়ার বিষয়ে ‘মক ভোটিং’ করা হয়েছে। যেহেতু একই ভোটারকে দুটি ব্যালটে ভোট দিতে হবে, তাই সময় কিছুটা বেশি লাগবে। এ কারণে ভোটের সময় বাড়ানো এবং বুথের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামী কমিশন সভায়।

তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমি নিজে ঘুরে দেখেছি, এবার ভোটারদের আগ্রহ অনেক বেশি। রাজনৈতিক নেতারা ইতোমধ্যেই তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণা আরও জোরদার হবে—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেউ ভোট দিতে অনাগ্রহী হলেও রাজনৈতিক নেতারা নিজ প্রয়োজনে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন। ফলে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে এবং দু’টি ব্যালটেই ভোট দেবে। আমার ধারণা, এবার ভোটারদের উপস্থিতি আগের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা বেশি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনও বিভিন্ন পরিপত্রের মাধ্যমে প্রশাসন, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা মাঠে কাজ করার সময় শতভাগ আচরণবিধি মেনে চলবেন। এতে স্পষ্ট বার্তা যাবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে। তখন মানুষের মনে আশা জাগবে, ভালো ভোটের প্রত্যাশা বাড়বে। আর যখন মানুষ নিশ্চিত হবে যে ভোট সঠিকভাবে হচ্ছে, তখন তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবে। ফলে পুরো নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠবে।’

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যেই আস্থা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে একটি সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার। এজন্য নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করছে, মাঠ প্রশাসন কাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোও ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করবে। ফলে ভোটাররা যখন কেন্দ্রে যাবে, তখন অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। আমরা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, এবার জনগণের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনে কি কি ব্যবস্থা নেবে কমিশন- এ প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের জেল অথবা দেড় লাখ টাকা জরিমানা শাস্তির বিধান রয়েছে। তারপর আরপিও-এর অন্যান্য যে ধারাগুলো রয়েছে সেই ধারা অনুযায়ী বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং সাজা হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও রয়েছে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সঙ্গে থাকবে মোবাইল কোর্ট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি টিম। পর্যবেক্ষকরাও কাজ করবেন। এবার নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে বডিওর্ন ক্যামেরা। সব মিলিয়ে তফসিল ঘোষণার পর রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এমন পরিবেশ তৈরি হবে, যেখানে কেউ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা বা বাধা দেওয়ার সাহস পাবে না। যারা দুষ্কৃতিকারী, তাদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। অতীতে নির্বাচনের কারণে সব পর্যায়ের সব ডিপার্টমেন্টই বিতর্কিত হয়েছিল। এবার তারা নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে এবং আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকারের সব বিভাগ থেকেই আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এটি নিঃসন্দেহে ভালো দিক।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -