বিশেষ প্রতিনিধি: সরকার পরিবর্তন হলেও স্বচ্চতায় ফিরে আসেনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। ঘুরে ফিরে অনেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠে আসছে অনিয়ম দুর্নীতি ঘুষ বাণিজ্যের মতো অপরাধের অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিদর্শক ওমর ইমরুল মহসীনের বিরুদ্ধে উঠে আসছে অপরাধের নানা ফিরিস্তি। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের যে নেতিবাচক চিত্রগুলো বারবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুলভাবে সমালোচিত হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে দেশের কলকারখানায় ভয়াবহ সব অগ্নিকান্ড ও ভবনধসসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা। স্মৃতি হয়ে আছে তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ড, রানা প্লাজার ভবনধস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার রাসায়নিক কারখানার অগ্নিকান্ড, হাসেম ফুডসের কারখানার অগ্নিকান্ড আর সর্বশেষ চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ডের মতো একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা এখনো ঘটেই চলেছে দেশে। প্রতিবারই প্রশ্ন উঠছে এমন সব দুর্ঘটনারোধে শ্রম মন্ত্রণালয় কেন নজর দিচ্ছে না। সরকার পক্ষ থেকে উল্টো অভিযোগের সঙ্গে শোনা যায়, এতো বিপুলসংখ্যক কলকারখানা পরিদর্শনের মতো পর্যাপ্ত লোকবল সরকারের নেই। আসলেই কি তাই? পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে সরকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করে, নিয়োগ দেয় শতশত জনবল। তবু এখনো কলকারখানার কর্মপরিবেশ আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়নি, সৃষ্টি হয়নি সেবার মান। নিরাপদ হয়ে উঠেনি দেশের কলকারখানার সুপরিবেশ। পরিদর্শনের নামে ঘুষ খেয়ে দুর্নীতি করে কলকারখানার অবৈধ নির্মাণও বন্ধ হয়নি। পরিদর্শকরা পদেপদে ঘুষ খাচ্ছেন। হাতপেতে ভাগ নিচ্ছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিদর্শক ওমর মোঃ ইমরুল মহসীন, এছাড়া দপ্তরের সকল বদলী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে তার সহ ধর্মিনী আওয়ামীলীগের পদধারী নেত্রী মুনা চৌধুরী ও ওমর মোঃ ইমরুল মহসিনের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি কাজের সহযোগী মাহবুব এর মাধ্যমেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে । বিশেষ সূত্রে জানা যায়,মুনা চৌধুরী আওয়ামীলীগের পদধারী নেত্রী হয়েও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন, তাকে খুশি করে ফাইল ছাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে । অভিযোগ রয়েছে বিগত সরকারের সময় দুই ধাপে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ২৩০ জন পরিদর্শক নিয়োগ দেয় শেখ হাসিনার সরকার। এসব অফিসারদের পুজি করে ইমরুল মহসীন তৈরি করেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। মহাপরিদর্শক ইমরুল মহসীনের নির্দেশে এই সব চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন উপমহাপরিদর্শক পদের কয়েকজন কর্মকর্তা।
সহকারি মহাপরিদর্শক ও পরিদর্শকদের উপরি আয়ের একটি অংশ ছাড়াও মাসিক ইনকাম তালিকা এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মহাপরিদর্শককে খুশি রাখতে এসব টাকা ওমর মোঃ ইমরুল মহসীনের কাছে পৌছানো হয়। বিগত সরকারের আমলের নিয়োগ পাওয়া গোল্ডেন অফিসারেরা এ আমলে ভালো থাকতে সাধারণত ইমরুল মহসীনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে থাকে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ইমরুল মহসীন নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন গাড়ি বাড়ি সহায় সম্পদ টাকার পাহাড়। তার এসব তথ্য আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, ওমর মোঃ ইমরুল মহসীন, এছাড়াও দপ্তরের সকল বদলী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে তার সহ ধর্মিনী আওয়ামীলীগের পদধারী নেত্রী মুনা চৌধুরী ও ওমর মোঃ ইমরুল মহসিনের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি কাজের সহযোগী মাহবুব । অনুসন্ধানে জানা যায়,মুনা চৌধুরী আওয়ামীলীগের পদধারী নেত্রী হয়েও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। অভিযোেগ রয়েছে বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ও দুর্দান্ত দাপটে ঘুষ দুর্নীতির টাকায় গড়েছেন নামে বেনামে সম্পত্তি। যা তদন্ত করলে সহজে বেরিয়ে আসবে আসল তথ্য। অধিদপ্তরের চেকলিস্ট অনুসারে কলকারখানায় শিশুশ্রম, দাহ্য পদার্থ,পর্যাপ্ত সিঁড়ি, জরুরি নির্গমন পথ, অগ্নিকাণ্ড হলে তা শনাক্ত ও নির্বাপণব্যবস্থা আছে কি না সেসব তদারক করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পরিদর্শকরা। তাদের কাজের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী কলকারখানাগুলোতে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি ইমরুল মহসীনের মতো অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে। থেমে যায় কলকারখানার নিরাপদ পরিবেশ। চলমান কালে অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের কীর্তির কথা শুনলে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিতে হয়। প্রতিবছর বারবার গণশুনানিতে এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে ১০০ টাকাও ঘুষ নিচ্ছেন নিম্নশ্রেণীর পিয়নগণ । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিমুখী কারখানার লাইসেন্সের আবেদন করলে তাতে সাড়া না দিয়ে পরিদর্শকরা ফাইল আটকে রাখেন তাদের ‘খুশি করানোর জন্য’। বিনিয়োগকারীরা অন্যপন্থায় প্রতিকারের চেষ্টা করলে এমন ঘটনার দু-একটি প্রকাশ হয়, মিডিয়ার হাতে আসে। বাকিগুলো চাপা পড়ে থাকে। ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে আটক হচ্ছেন অনেকেই, এমন ঘটনাও আছে। ঘুষের টাকায় তারা পোষেন ড্রাইভার, ক্যাশিয়ার, পিয়নসহ বাহারি টাইপের ব্যক্তিগত কর্মচারী। পরিদর্শকরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুষসহ হাতেনাতে ধরা পড়ছে। কারখানা মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে তারা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে। এমন অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। অসংখ্য মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় প্রতি মাসে মামলার তালিকা বড় হচ্ছে। তবুও কর্মকর্তাদের অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্য থামছে না। সেবা শুণ্য হয়ে পড়েছে করকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। মহাপরিদর্শক ইমরুল মহসীনের মতো অযোগ্য অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকার প্রশাসন জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে কলকারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সংবাদটি সত্য নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন আমি ব্যক্তিগত জীবনে সততার সাথে চাকরি করেছি, তবে আমাদের অধিদপ্তরের অসৎ কোন অফিসার থাকলে থাকতে পারে তাঁর দায় আমি বহন করবো না।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

