নাজমুল হাসান:
কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরের পাশের একাধিক গ্যাসক্ষেত থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হলেও আবাসিক খাতে সেই গ্যাসের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না উপজেলার অধিকাংশ পরিবার। প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এই উপজেলাকে বলা হয় ‘গ্যাস নগরী’, কিন্তু এখানকার মানুষের চুলায় এখনো জ্বলে মাটির চুলা বা সিলিন্ডার গ্যাস—যা স্থানীয়দের মতে “বাতির নিচে অন্ধকার”।
মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও ৩০৮টি গ্রামের মধ্যে মাত্র ১২ হাজার পরিবার আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। উপজেলা সদরের কিছু অংশে এবং অল্প কয়েকটি ইউনিয়নে নামমাত্র কিছু পরিবার এই সুবিধা ভোগ করছে। কিন্তু উপজেলার লাখো পরিবার এখনো কাঠ ও খড়ের চুলার ওপর নির্ভরশীল।
উচ্চবিত্ত শ্রেণির কিছু পরিবার সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করলেও, গ্যাস সংযোগ না থাকায় বহুতল ভবনের মালিকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুরাদনগরের গ্যাস দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ পরিবার ও কারখানা লাভবান হলেও গ্যাসক্ষেত্রের পাশের মানুষরাই বঞ্চিত।
মুরাদনগর উপজেলার বাখরাবাদ, বাঙ্গরা ও শ্রীকাইল-৩ (মুকলিশপুর) গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস। বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস সরবরাহ করছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)। আর শ্রীকাইল-৩ ও বাঙ্গরা ফিল্ডের গ্যাস উত্তোলন করছে বাপেক্স ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাল্লো যৌথভাবে।
১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শেলওয়ে কোম্পানির মাধ্যমে বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে, যার গ্যাস মজুদ ধরা হয়েছিল প্রায় ১.০৪৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ১৯৮৪ সালে এখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বাঙ্গরা-মুকলিশপুর গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়, যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,২০১৪ সালে ‘আমাদের গ্যাস আমাদের অধিকার’ শীর্ষক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মুরাদনগরের ২২টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় এক যুগ পার হলেও সেই দাবির বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের মজুদও কমছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
জাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ সওকত আহমেদ মীর বলেন, মুরাদনগরে উত্তোলিত গ্যাস দিয়ে রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে, অথচ এখানকার মানুষ বঞ্চিত। সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি—এই উপজেলায় আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ডিজিএম মো. আব্দুর রহিম প্রমাণিক বলেন, আমরা এখান থেকে গ্যাস উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করি। সংযোগ বা বিতরণের দায়িত্ব আমাদের নয়। গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
স্থানীয়দের দাবি, ঘরের পাশে গ্যাসক্ষেত্র, অথচ ঘরে নেই গ্যাস—এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে মুরাদনগরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
আলোকিত প্রতিদিন/০৩ নভেম্বর ২০২৫/মওম


