বিশেষ প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল আরও এক মাস আগে। এবং হত্যার ওই ছক আঁটেন জুবায়েদের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং তার প্রেমিক দুজনে মিলে। জুবায়েদ হত্যা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, হত্যার দিন গত রোববার মেয়েটির প্রেমিকের সঙ্গে তার দুইজন বন্ধুও ছিলেন।
জুবায়েদকে তার ছাত্রী ‘পছন্দ করতেন’ জানিয়ে পুলিশ আগেই বলেছিল, সেই ক্ষোভে ওই ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ (আটক কলেজছাত্র) তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার আর ধারণার কথা নয়, ওসি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা জুবায়েদের ছাত্রী ও তার বয়ফ্রেন্ডের পরিকল্পিত হত্যা’।
তিনি বলেন, “ওই কলেজছাত্র সঙ্গে মেয়েটির ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝে আবার মেয়েটি জুবায়েদের উপর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় মেয়েটি তার প্রেমিককে না করে দেয় এবং সে জুবায়েদকে পছন্দ করে বলে জানায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার বয়ফ্রেন্ডকে জানায় যে, জুবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখন জুবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে দুজনে মিলে। প্রাথমিকভাবে জুবায়েদকে হত্যার এই পরিকল্পনা মেয়েটি স্বীকার করছিল না জানিয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “পরে মেয়েটি ও কলেজছাত্রকে মুখোমুখি করলে সত্য জানায় সে। জুবায়েদকে কীভাবে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পরিকল্পনা করে তারা।
জুবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। গেল রোববার জুবায়েদকে ছুরিকাঘাতের পর সিঁড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্ত পড়েছিল।
এরপর পুলিশ ওই বাসায় ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপর রাত ১১টায় ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে তাঁতীবাজার এলাকায় প্রধান সড়ক অবরোধ করে। প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বংশাল থানার দিকে রওনা হয়। পরে সেখানে অবস্থান করে টায়ার পুড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে রোববার সন্ধ্যা থেকেই ওই কলেজছাত্রের নাম এবং ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর সোমবার সকালে ওই কলেজছাত্রের মা রেখা আহমেদ ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বংশাল থানায় হস্তান্তর করে বলে তার স্বজনেরা জানিয়েছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি


