তৌহিদুল ইসলাম সরকার,-নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বাতুয়াদী গ্রামে দেশ বরেণ্য ৩৬০ জন আওলিয়ার মধ্য একজন হযরত জাহাঙ্গীর শাহ ( রঃ) উনার নাম অনুসারেই এই জাহাঙ্গীর শাহ (রঃ) আলাইহি’র মাজার ও মসজিদ অবস্থিত। কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রায় ৭০০ বছর ধরে অনেক অলৌকিকত্বের নিদর্শন বহন করে চলা এ স্থানটি। এটি নান্দাইল উপজেলা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এটি উপজেলার উল্লেখযুগ্য দর্শনীয় স্থানও বটে। শুক্রবার জুম্মার মসজিদে নামাজ পড়তে আসা স্থানীয় অনেকেই বলেন-এই আওলিয়ার নামানোসারেই উক্ত জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ খচিত মাজার শরিফ তার সংলগ্ন উত্তর পাশে দ্বিতল নান্দনিক মসজিদ, দ্বিতল মাদ্রাসা, মাজারের দক্ষিণ পূর্ব পাশে মহিলাদের এবাদতের জন্য ঘর, পিছনে অলৌকিকত্বের নিদর্শন বিশাল ভর পুকুর,সামনে বিস্তৃত মাঠ। এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ নামাজ পড়তে আসেন এ মসজিদে এবং রওজা শরিফ জিয়ারত করতে,বিশেষ করে শুক্রবারে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ নারী পুরুষ আসেন, কেউ আসেন মসজিদে নামাজ পড়তে, কেউবা আসেন মান্নত পূরণ করতে এবং মাজার জিয়ারত করতে। আবার কেউ কেউ আসেন ঐতিহাসিক স্থানটি ভ্রমন করতে। রওজা শরিফের একপাশে দেখা যায়, একটি বৃহত কালো পাথরের গায়ে অনেকে দুধ ঢালছেন,পরে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান- মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য মানুষ পাথরের গায়ে দুধ ঢালে এ থেকে তারা কৃতকার্যও হচ্ছে। যে গাভীর দুধ পাথরে ঢালা হয় সে গাভী দুধই দেয় বেশি।
অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়,একসময় পুকুর থেকে উঠে আসা তিনটি কালো পাথর রওজার পাশে এসে স্থান নেয় পাথর তিনটি জীবিত ছিলো কিন্তু কোনোএক মহিলার নাপাক শরিলের কাপড়ের ছুঁয়াতে দুটি পাথর স্থান ত্যাগ করে, একটি চলে যায় পিছনের পুকুরে আরেকটি কাছাকাছি থাকা মোড়াল বিলে আর একটি মৃত হয়ে দাড়িয়ে থাকে। এ ছাড়াও কথিত আছে, এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠান হলে, দিন কন ঠিক করে ঐ পুকুর পাড়ে গিয়ে-আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে পুকুর থেকে উঠে আসতো হাঁড়ি পাতিল,থালা-বাটিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং অনুষ্ঠান শেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পুকুর ঘাটে দিয়ে আসলে আবার পুকুরের পানিতে নেমে যেতো কিন্তু জৈনেক ব্যক্তি একদিন একটা নেমকদানী লুকিয়ে রাখায়- ঘটতে থাকে ভয়ংকর কার্যকলাপ এবং পুকুরের পানিতে আর ফেরত যায়না-বাকী জিনিসপত্র পরে এটা ফেরত দিলে শেষবারের মতো চলে যায় ।
জানা যায়,৩৬০ জন আউলিয়া হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এবং তার সফর সঙ্গীরা প্রায় ৭০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটে আসেন। তারা রাজা গৌর-গোবিন্দের অত্যাচারের প্রেক্ষিতে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিলেট অঞ্চলে আসেন বলে মনে করা হয়। সিলেট বিজয়ের পর শাহজালাল (রহ.)-এর অনেক সঙ্গী আউলিয়া ইসলাম প্রচারের জন্য সিলেটের আশেপাশে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ সিলেটে থেকে যান এবং ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, আবার কেউ কেউ তাদের অনুসারীদের সাথে অন্যান্য অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য চলে যান। হযরত জাহাঙ্গীর শাহ (রঃ)-তাদের মধ্যে একজন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তৎকালীন সময়ে শান্তির বার্তা নিয়ে ইসলাম প্রচার করতে এবং নিপিড়ীত নির্যাতিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এখানে আসেন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি


 
                                    