আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন। রোববার রাতভর রাশিয়ার হামলায় প্রাণহানি ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের এই ঘটনা ঘটেছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন।
এদিকে, মস্কোর হামলার পর নিজেদের আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ড। একই সঙ্গে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্ররাও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
রবিবার রাতভর ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ ছিল রাশিয়ার হামলার প্রধান লক্ষ্য। ওই অঞ্চলের প্রধান মাকসিম কোজিৎস্কি বলেছেন, সেখানে চারজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। জাপোরিঝিয়াতেও রুশ হামলায় একজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের অবকাঠামো লক্ষ্য করে ৫০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ৫০০টি অ্যাটাক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। তবে রোববার রাতের হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত রাশিয়া কোনও মন্তব্য করেনি।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ, খেরসন, ওডেসা এবং কিরোভোহরাদ অঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। তিনি বলেন, আমাদের আরও সুরক্ষা প্রয়োজন এবং প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দরকার।
ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আকাশপথে একতরফা যুদ্ধবিরতি সম্ভব এবং সেটিই প্রকৃত কূটনীতির পথ উন্মুক্ত করতে পারে।’’ এই হামলার মাত্র কয়েকদিন আগে মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, রুশ ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পোল্যান্ডের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘‘পোলিশ এবং মিত্রবাহিনীর বিমান আমাদের আকাশসীমায় টহল দিচ্ছে। এছাড়া স্থলভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও রাডার ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।’’
রবিবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ইউক্রেনজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের বিমান হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়ার পর ওই সাইরেন বাজানো হয়।
ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। রাতে রুশ হামলায় জাপোরিঝিয়া, চেরনিহিভ ও সুমি অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাপোরিঝিয়ার গভর্নর ইভান ফেদোরভ বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আক্রান্ত হওয়ার পর ৭৩ হাজারেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন।’’ তিনি বলেন, হামরায় একজন নিহত ও অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীও রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত একটি বহুতল ভবন ও পুড়ে যাওয়া গাড়ির ছবি প্রকাশ করেছেন ফেদোরভ।
চেরনিহিভ ও সুমি অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। লভিভের মেয়র আন্দ্রি সাদোভি বলেছেন, পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের শহরটির কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রথমে ড্রোন এবং পরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার জন্য সক্রিয় করা হয়েছে।
ন্যাটোর আরেক সদস্য রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া আকাশে অজ্ঞাত বস্তু দেখা যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। সম্প্রতি ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং জার্মানিতেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের প্রধান বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে পুনরায় চালু করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভিলনিয়াসমুখী একাধিক বেলুন শনাক্ত হওয়ায় বিমান চলাচল স্থগিত ও কয়েকটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
আলোকিত প্রতিদিন/০৫ অক্টোবর ২০২৫/মওম