বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সরকার যায়, হয় ক্ষমতার পরিবর্তন। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেক্টরে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ হয় না। অনিয়মের দায় স্বীকার করেছে উপদেষ্টা। প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১ হাজার ৬১৯ গুণ বেশি দামে মালামাল আমদানি। প্রমান দিচ্ছে পিজিসিবিএলের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিইএ কোম্পানি লিমিটেড ও ভারতের স্কিপার লিমিটেড। দুর্নীতি আর লোকসানের ভারে নুয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিগত দিনে পর্যায়ক্রমে খোদ প্রধানমন্ত্রী এই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন প্রায় তিন দশক। হিসাব টেনে দেখাগেছে কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কেনাকাটায় ২৫ বছরে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। পাহাড়সম অভিযোগ নিয়ে চলছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) অনিয়ম ও দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে উঠার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ আছে অসংখ্য কর্মকর্তা কর্মচারি লুটপাট করে রাতারাতি হয়েছে কোটিপতি।নামে বেনামে অর্জন করেছে গাড়ি বাড়ি প্লট ফ্লাট অঢেল সহায় সম্পদ। সব সময় সরকারে থাকা প্রভাবশালীদের আশকারায় এরা এক-একজন হয়ে ওঠে অপরাধ রাজ্যের মহারাজা। বিষ্ময়কর নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে থাকে নানা দোষে অভিযুক্ত এ চক্রটি। আবার এরাই পদোন্নতির পাশাপাশি পায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। গ্রাহক হয়রানি থেকে শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, বদলী বানিজ্য গোলকধাধার টেন্ডার ক্রয়সহ অনিয়ম-দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে দায়িত্বে থাকা অসাধুরা। অবৈধ অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। বিগত দিনে এপিএসসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কোম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে এপিএসসিএলের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১শ ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি ও কোম্পানি খোলার অভিযোগ উঠে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া দুই স্প্যানিশ কোম্পানি ঘুষের অর্থ স্পেনের মাদ্রিদ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরের ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে টাকা পাঠানো ও উত্তোলনের প্রমান মিলে। সুনির্দিষ্ট এই অভিযোগের পর বিদ্যুৎ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করে। ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। যতই রক্ত গঙ্গা বয়ে চলুক, অভ্যত্থান হোক, বিপ্লব হোক সুবিধাভোগী এই চক্রটি কিছুতে ভয় পায়না। অলৈকিক কারণে এদের ওপর কোন চাপতাপ আসে না। ফেরত আসেনি পাচার হওয়া টাকা। সরকার পরিবর্তন হলেও থামেনি বিদ্যুৎ সেক্টরের অনিয়ম দুর্নীতি। সরাসরি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ডিপিডিসি ও ডেসকো। সরকার বিরোধী ডেসকোর সাড়ে পাঁচ লাখ লিপফলেট এখন গ্রাহকদের হাতে হাতে। সেবাশুন্য হয়ে পড়েছে ডিপিডিসির ফিল্ড। রাজধানী ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র মুºাপাড়া ডিপিডিসিতে কর্মরত কেউ বিশ্বাস করতে নারাজ, জুলাই বিপ্লবীদের অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্চতার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। নতুন বাংলা বিনির্মানে সরকার কাজ করছে। বর্তমানে একটি অরাজনৈতিক সরকার সততা নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি এদের বিশ্বাসের ঘরে জায়গা করতে পারেনি। না পারার কারন অনেক। ডিপিডিসি বিগত সরকারের আমলে যেমন চলেছে এখনো তেমনি চলছে। টানা তিন সপ্তাহ অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, এখানে সেবা পেতে হলে দরকার টাকা, বিনা টাকায় সেবা চিন্তা করা যায় না। আবেদনের পর একটি আবাসিক মিটারের বিপরীতে একজন গ্রাহককে খরচ করতে হয় ৮০ হাজার থেকে একলাখ টাকা। একটি সাধারণ বানিজ্যিক মিটারের জন্য খরচ করতে হয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। মুºাপাড়া ডিপিডিসির আওতাধীন চোরাই লাইনগুলো চলে অফিসের মর্জির ওপর। চোরাই লাইনে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে যে বিদ্যুৎ ঘাটতি হয় তার দায়ভার কর্তৃপক্ষকে বহণ করতে হয়। অথচ লাভের অংশটি ভাগবাটোরা করে নেয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিরা। নাম গোপন রাখার শর্তে মুºা ডিপিডিসির একটি সূত্র জানান, বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিমাসে ৮০ লাখ টাকা বাড়তি আয় আসে। উপরি ইনকামের একটি মোটা অংশ চলে যায় উপরে, বাকি অংশের বেশিটা পায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর, পদ অনুসারে হয় টাকা বন্টন। গ্রাহক সেজে একটি মিটারে আবাসিক সংযোগ পেতে মোট কত টাকা খরচ হয় এমন প্রশ্নে উত্তরে, ডিপিডিসি মুºাপাড়া শাখার সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, সঠিক ভাবে আমি বলতে পারবো না। হিসাব রক্ষকের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদুল জানান, কিসের বিপ্লব টিপ্লব, আমরা যা করবো সেটা হবে। সরকার আবার কারা, আমরাই তো সরকার। উল্টো প্রশ্নছুড়ে বলেন, সরকারি লোক না হলে কি চেয়ারে বসেছি। তিনি আরও জানান, চেয়ার পেতে ঘাটে ঘাটে টাকা ব্যয় করতে হয়, নতুন বাংলা হবে না পুরান বাংলা হবে এটা আমার জানার বিষয় না। সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে, অনেকটা ক্ষেপে গিয়ে রাশেদুল হক বলেন, সেবা দিচ্ছি না তো অফিস কি এমনি চলছে না কি ? একটি গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছেন, স্বল্প সময়ে সহকারি প্রকৌশলী রাশেদুল হক নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার সহায় সম্পদের মালিক হয়েছেন। মুºাপাড়া ডিপিডিসির কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরকে। অফিসিয়াল মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বারবার বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকদিন ধরে অফিসে গেলেও এই কর্মকর্তার পিও পরিচয়ে তামজিম জানান স্যার অফিসের বাহিরে আছেন আবার কখনো জানান, স্যার মিটিংএ আছেন। ডিপিডিসি মুºার বিশেষ সূত্রে জানা গেছে নির্বাহী স্যার সাংবাদিক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। অবশেষে পাওয়া গেলো নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুরকে, অনিয়মের বিষয়ে জানানো হলে এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগটি লিখিত ভাবে জানান, প্রমানসহ একজন গ্রাহকের অভিযোগের বিষয় জানালে তিনি বলেন আমি দেখছি। দীর্ঘ সময় পার হলেও তিনি আজ কাল বলে ঘোরাতে থাকেন। চলমা..
আলোকিত প্রতিদিন/১৭সেপ্টেম্বর ২০২৫/মওম
- Advertisement -