জাহিদ হাসান হৃদয় : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, পোলিং এজেন্টদের হয়রানি, জাল ভোট, ভোটারের অতিরিক্ত ব্যালট কেন্দ্রে পাঠানো, ব্যালট পেপার ফ্লোরে পড়ে থাকা ও পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ আরও পাঁচ সংগঠন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ (একাংশ), ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্যানেল সংহতি জানায়।
গতকাল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী। এদিকে নানা অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সম্প্রীতির ঐক্য ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেলসহ পাঁচজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এ ঘোষণা দেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাকসুতে মোট ছয়টি প্যানেল ভোট বর্জন করেছে। এদিকে এবার জাল ভোট ও ভোটারের অতিরিক্ত ব্যালট কেন্দ্রে পাঠানোসহ জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ‘সংশপ্তক পর্ষদ’। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ভোট শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে চারটি প্যানেলের পক্ষে এ ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান। এতে ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ (একাংশ), ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্যানেল সংহতি জানায়। শরণ এহসান তার বক্তব্যে বলেন, “পুরো নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। জাহাঙ্গীরনগরের আপামর শিক্ষার্থী অপেক্ষা করেছে এই নির্বাচনের জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত রকমভাবে আমরা ক্ষুদ্ধ, হতাশ। আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।” এদিকে, জাকসু বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংশপ্তক পর্ষদ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- ১. ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের জাল ভোটের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে ১৫ নম্বর ছাত্রী হল কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জায়গায় পূরণ করা ব্যালট পাওয়া গেছে। ২. শহীদ সালাম বরকত হলে ভোটার সংখ্যা ২৯৯ জন হলেও ভোটকেন্দ্রে মোট ব্যালটপেপার গিয়েছে ৪০০টি। ৩. ভোটার তালিকায় ছবি যুক্ত করা হয়নি। যে কেউ এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। রফিক-জব্বার হলে তার প্রমাণও মিলেছে। ৪. প্রতিটি হলেই বিভিন্ন সংগঠনের বহিরাগতের অবস্থান দেখা গেছে। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ৬. এছাড়া অন্যান্য অভিযোগও আমরা দেখতে পেয়েছি। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন বর্জনের পর নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে বিক্ষোভ করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এসময় ‘ভোট চুরির জাকসু, মানি না মানবো না’, ‘ভোট চুরির জাকসু, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন তারা। মিছিলে ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীরাসহ জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, যুগ্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন। দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি