আজ শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতা: অনিয়মের মাধ্যমে সার আমদানির অনুমতি পেলো দেশ ট্রেডিং

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিবেদক, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা কৃষির ওপর নির্ভরশীল, অথচ কৃষকদের জন্য এই সার আমদানিতে আহুত দরপত্রের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে দেশ টেডিং করপোর্রেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই নজিরবিহীন অনিয়ম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে- জানা যায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নোটিশের কপি ও কার্যাদেশ পর্যালোচনাসহ একাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সার হিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানির জন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু এবার এ প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়েছে ঠিক তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি করা হয়।

এদিকে-সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাই একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। যেখানে টেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উল্টো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া জন্য আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম।

পরবর্তীতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য আমদানিকারকরা রাজি হলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারকদের কাছে সম্মতিপত্র চায় মন্ত্রনালয়।  আমদানিকারকদের নিকট থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করার পর ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে এমনকি সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র (ধারা ৮-গ) অনুযায়ী প্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ প্রদান করার বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে দরপত্রের প্রাপ্ত দরের বাইরে গিয়ে মনগড়াভাবে নেগাশিয়েশনের মাধ্যমে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সার আমদানির কার্যাদেশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম ও যুগ্ম সচিব মোঃ খোরশেদ আলম।

- Advertisement -

শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনগড়াভাবে একাধিক দরে সার সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করেন তিনি। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং কপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোল্ডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে  ৪০হাজার মেট্রিক টন সার দুই ধরণের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) আমদানির অনুমতি দেয়। অথচ এই কোম্পানী মন্ত্রণালয়কে এই দরে কোন প্রাইজ অফার করেনি। বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং মন্ত্রণালয়কে যে প্রাইজ দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশী দরে তাদের কে আমদানির অনুমতি প্রদান করে।

ওই মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন- মন্ত্রণালয়েরে একজন সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করছেন। তিনি আরো বলেন- এ ধরনের অপকর্মে বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরা দরকার বলে আমি মনে করি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আমদানী উয়িং কর্তৃপক্ষ পুরোপুরো স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে একটিমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকেই সার আমদানির জন্য অনুমতি প্রদান করে।

অভিযোগে দেখাগেছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সারা দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের সার আমদানির অনুমোদন না দিয়ে বলির পাঠা বানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব চক্র তাদের নিজেদের ফায়দা হাসিল করেছেন।

অভিযোগ-অনুযোগের এতকিছুর পরেও ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইং’ পূনঃ আমদানির জন্য ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ পুণরায় আরেকটি দরপত্র আহবান করে। অভিযোগ রয়েছে এখানো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এই কাজ করেছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতার দরের বাইরে গিয়ে নেগোসিশশেনর মাধ্যমে বিধি লংঘন করে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের এজেন্ডা বাস্তবায়ন তথাপি দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে বাজারে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত করা হচ্ছে।

অনিময়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে আমদানির অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই  উদ্বেগজনক। যদি এমনটি হয়ে থাকে, একই স্টিমেট দিয়ে রাতের আঁধারে একটি কোম্পানিকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনা ঘটে তবে সেটা  তদন্ত করা উচিত আমরা মনে করি। প্রয়োজনে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা উচিত। পরিবর্তন দরকার। আগের সিস্টেমে যদি অনিয়ম হয় তা দু:খজনক। সবকিছুতে জবাবদিহি থাকা উচিত। লটারিং সিস্টেম থাকা সত্বেও তা না মানার বিষয়টিও আমাদের ভাবায় যে সেখানে কি পরিমান আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে চাইলে- তিনি বলেন টেন্ডারের বিষয়ে আপনার কিছু জানার থাকলে মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলেন, আমার সাথে নয়। তারা জানাবে আমি কিভাবে পেলাম। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ কথা বলতে পারবোনা বলেই কথোপকথন বন্ধ করে ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে তারা কেউ ফোন ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি  

- Advertisement -
- Advertisement -