আতীক রোজেন ফেনী জেলা প্রতিনিধি। ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া আলী রাজা ভূঁইয়া বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ের ৭ মাসের মাথায় নববধূর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এটা পরিকল্পিত হত্যা না আত্নহত্যা এ নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। ময়নাতদন্ত শেষে গত শুক্রবার বাদ মাগরিব সোনাপুর পন্ডিত বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নিহত বিবি ফাতেমা তামান্নাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে তারই শশুর ও শাশুড়ি। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সোনাপুর পন্ডিত বাড়ির বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেনের ছেলে আবদুল্লা আল রোমানের হাত ধরে পালিয়ে যায় বিবি ফাতেমা তামান্না। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় টানাপোড়ন।
নিহতের পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে বিবি ফাতেমা তামান্নাকে হত্যা করে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত শুক্রবার নিহত বিবি ফাতেমা তামান্নার বড়ভাই মো. আবদুল কাদের তারেক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রেমের সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ফেনী কোর্টে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর পন্ডিত বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুল্লা আল রোমান একই উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া আলী রাজা ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা বিবি ফাতেমা তামান্নার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
পালিয়ে বিয়ে করার কারণে বিবি ফাতেমা তামান্নার পরিবার তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মামলার এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, গত বুধবার তামান্নার ভাইকে ফোন করে তারই স্বামী রোমান বলেন, সিলিং ফ্যানের লোহার হুকের সাথে ওড়না প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে তামান্না। এই খবর শুনে তাৎক্ষনিকভাবে তামান্নার বড়ভাই তারেক ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পর মুঠোফোনে তারেক তামান্নার স্বামী রোমানের সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় রোমান জানায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তামান্নাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে বেড খালি না থাকায় তামান্নাকে চট্টগ্রাম এশিয়ান হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে। এরপর মামলার বাদী আবদুল কাদের তারেক তার বোন বিবি ফাতেমা তামান্নাকে দেখতে চট্টগ্রাম এশিয়ান হাসপাতালে যান।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তামান্নাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতলে প্রেরণ করেন। নিহত বিবি ফাতেমা তামান্নার বাড়িতে শনিবার সরেজমিনে গেলে তার দুলাভাই মো. বেলাল হোসেনের সাথে দেখা হলো। এ সময় তিনি বলেন, তামান্না খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। এবার সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছে। সোনাপুরের রোমান তামান্নাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্নহত্যা বলে চালিয়া দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এ সময় তিনি প্রতিবেদকের মাধ্যমে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।নিহতের বড়ভাই সৌদি প্রবাসী আবদুল কাদের তারেক বলেন, আমার বোন তামান্না প্রেম করে বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে লাশ হতে হলো। সে আত্নহত্যা করার মতো মেয়ে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। সরেজমিনে গিয়ে নিহতের শশুর মো. বেলাল উদ্দিনের কাছে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পুত্রবধূ সাতমাসে আমাদেরকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছে আমি আমার ৬৬ বছর বয়সে এ ভালোবাসা পাই নাই। এইরকম একটা কাজ তামান্না কেনো করলো এটা আমার বুঝে আসে না। নিহতের ভাসুর আবদুল্লা আল নোমান বলেন, তামান্না ফাঁস দেওয়ার ৫ মিনিট আগেও আমাকে ফোন করেছিল, ভাইয়া আপনি কখন খেতে আসবেন। সত্যিই সে খুবই ভালো মনের মানুষ ছিল। আমরা তাকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, মামলা হয়েছে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ কাজ করছে। মামলার তদন্ত শেষে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
- Advertisement -