আজ সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চিতলমারীর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী নেতা, নিজাম উদ্দিন শেখের অবৈধ সম্পদের পাহাড়

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিবেদক: বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নিজাম উদ্দিন শেখ আওয়ামীলীগ আমলে নেতা শেখ হেলালের আর্শিবাদে একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হেলালের প্রভাব দেখিয়ে নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বরাদ্দ টি আর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপি, উন্নয়ন সহায়তা তহবিল, অতিদরিদ্রের কর্মসূচি, ইজিপিপি প্রকল্পের কাজে অনিয়ম দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জমাজমি দখলদারি মাছের ঘের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে চিতলমারী সদর ইউনিয়নের শাজাহান, কেরামত আলী আকবর নামীয় কয়েক জন অভিযোগ করে জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানদের সাথে আত্মগোপনে যায় নিজাম উদ্দিন শেখ। চিতলমারী সদর ইউনিয়নে গত ১৫ বছর ধরে সন্ত্রাস ও মাদকের নৈরাজ্য গড়ে তুলে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শেখ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন নিজাম চেয়ারম্যান। এলাকার হতদরিদ্র আবদুর রাজ্জাক সুফিয়া বেগম দম্পতির ছেলে নিজাম উদ্দিন শেখ। গ্রামের মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় মেম্বার হয়ে বদলে যায় নিজামের দিন। এরপর নজরে আসে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলালের, রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় নিজাম উদ্দিনের। সাধারণ মানুষ ভোট না দিলেও হয়ে যায় চেয়ারম্যান। নিজাম উদ্দিন শেখ নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। সদর রোডে প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে একটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। নিজের বাড়িতেও গড়ে তুলেছেন কোটি টাকা দিয়ে তিন তলা একটি বাসভবন। তিন জায়গায় রয়েছে দুইশো ১৯ বিঘার মাছের ঘের। ক্রয় করেছেন ৪০ বিঘা আবাদি জমি। অভিযোগ রয়েছে, ভোটার কার্ড জালিয়াতি, ওয়ারিশ সনদ ভুয়া বানিয়ে চিতলমারী উপজেলার পাশে ৪৭ শতাংশ জমি জোরদখলে নিজ নামে কবলা করে নিয়েছেন নিজাম চেয়ারম্যান। খুলনার জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে ৪ কাঠা, ৩ কাঠা ও ৫ কাঠার জমির প্লট ক্রয় করেছেন। চিতলমারী উপজেলা সদরে জমি ক্রয় করে একটি বহুতল আলিশান বাড়ি নির্মান করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকা ভূক্ত একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নিজাম উদ্দিন শেখ রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে বেনামীতে জমা রেখেছেন। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইউনিয়নে অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি ইজিপিপির কাজে অনিয়ম করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন। চল্লিশ দিনের প্রকল্পে ৩০-৩৫ জন লোক কাজ করার নিয়ম থাকলেও কয়েক বছর যাবত ১০-১২ জন লোক দিয়ে নামে মাত্র কাজ করিয়ে শ্রমিকদের অনেকের মোবাইল একাউন্ট চেয়ারম্যান বাদ দিয়ে তাদের নিজস্ব নাম্বারে একাউন্ট করে দিয়েছে। একাউন্ট পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান টাকা আত্মসাৎ করেছে। যার সত্যতা ব্যাংকে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগে আরো জানা যায়, সরকারি সেবা দিতেও নিজাম চেয়ারম্যান অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তরাধিকার সনদ দিতে তার নির্দেশে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়। জন্মনিবন্ধন করতে সরকারি ফি ২৫/৫০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গ্রাম আদালতে বিচার পেতে ১০ থেকে ২০ টাকা সরকার নির্ধারিত ফির পরিবর্তে হাজার টাকা আদায় করেন। এসব অনিয়ম করে নিজাম উদ্দিন চেয়ারম্যান কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলালের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তখন টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য গোপন করে জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে কমিয়ে চাকরির তদবির বানিজ্য করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতিক সময়ে নিজাম উদ্দিনের অভিযোগের বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এমনকি একাধিকবার লাঞ্ছিত ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সরকারি অনুদানের টাকা ও বিভিন্ন গ্রামে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেওয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। অপর দিকে ভিজিডি তালিকা প্রণয়নে ঘুষ গ্রহণসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যন নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে ভিজিডি তালিকায় নাম উঠানোর কথা বলে অসহায় দুস্থদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করছেন। বাদ পড়েনি বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতাও। এ ব্যাপারে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চিতলমারী ইউপির সচিব বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন হোয়াটসআপে ফোন করলে তিনি ধরবেন। সেখানেও সাংবাদিকের কথা শুনে চেয়ারম্যান নিজাম ফোন রিসিভ করেননি।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -