আজ সোমবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবার কুকীর্তি ফাঁ*স বাপ-বেটা ফোর টু*য়েন্টি!

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিনিধি,  তৌহিদ আফ্রিদিকে শুধুই একজন ইউটিউবার ভাবলে ভুল হবে। ৩০ জুলাই, ২০২৪। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরত মানুষের ওপর চলতে থাকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অত্যাচার। নির্বিচারে গণহত্যা। এই গণহত্যায় বড় ভূমিকা নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। বিশেষত এর নেতৃত্ব দেন ডিবিপ্রধান হারুন। আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে থাকা ৬ সমন্বয়ককে গ্রেফতারের পর আন্দোলন যখন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাবলিশ করেন তিনি।

দেখা যায় তাতে, ডিবি হারুন এক নারীর সাথে আপত্তিকর কথা বলছেন। ওই ভিডিও প্রকাশের পর হারুন নিজের উলঙ্গ ভিডিও সরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তৌহিদ আফ্রিদিকে তার কার্যালয়ে আসতে বলে। তৌহিদ আফ্রিদি তখন মুহম্মদ জুবায়ের নামের একজন সোশাল মিডিয়া এক্সপার্টকে নিয়ে আসেন।

জুবায়ের জানান, রাতভর তাকে ডিবি কার্যালয়ে রেখে ফেসবুক ও বিভিন্ন সাইট থেকে হারুনের ভিডিও সরাতে বাধ্য করে তৌহিদ আফ্রিদি। তৌহিদ আফ্রিদির নিয়ন্ত্রণেই চলতে হতো সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় সব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের। কথামতো না চললেই শুরু হতো নির্যাতন।

৩০ জুলাই রাতে হারুনুর রশিদের ভিডিও প্রকাশের পর আব্দুল্লাহ আল ইমরান নামে আরেকজনকে তুলে আনা হয়। তাকেও জোরপূর্বক ওই ভিডিও সরানোর কাজে বাধ্য করা হয়।

- Advertisement -

তৌহিদ আফ্রিদির নির্যাতনের শিকার হন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বপন আহমেদ। স্বপনের মূল ‘অপরাধ’ ছিল—তিনি আলেমদের পক্ষে এবং ভারতের বিপক্ষে কনটেন্ট তৈরি করতেন। এ কারণে আফ্রিদি তাকে এ ধরনের কনটেন্ট বানাতে নিষেধ করেন। কিন্তু স্বপন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে আদালতের বারান্দায় পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

হাসি-খুশির আবরণে ভয়ঙ্কর এক অন্ধকার জগৎ গড়ে তুলেছিলেন আফ্রিদি। সেই রহস্যময় জগতের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে আছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

আফ্রিদির একটি  গোপন আস্তানা ছিল। নতুন কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে রাজি হলে সেখানে তাকে  আনা হতো। তবে ওই আস্তানায় যখন কাউকে শাস্তি দেওয়া হতো, সেই ভিডিও ধারণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এ যেন আরেক আয়নাঘর।

তৌহিদ আফ্রিদির নির্মম নির্যাতনের শিকার ব্লগারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন সায়েম। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাশে একটি ভবনে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। সায়েমকে ৩০ থেকে ৩৫টি থাপ্পড় মারা হয়। সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনেই আফ্রিদি তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন।

আফ্রিদির নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী একজন সেই ভয়াবহ দিনের কথা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী জানান— “যেভাবেই হোক একটা ভিডিও করাবে। যদি কোনো ভিডিও ব্ল্যাকমেইলের জন্য যথেষ্ট না হয়, তখন কী করবে? একটা মেয়ে দিয়ে দেবে। কারণ ওই জিনিস মানুষকে সমাজে কলঙ্কিত করে। কোনোদিন যদি ভুক্তভোগী আফ্রিদির বিপক্ষে যায়, তখন ওই ভিডিও দিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করে দেয়।”

জুলাই আন্দোলন চলাকালে আফ্রিদি দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের হুমকি দিয়ে সরকারের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। তাছাড়া, আফ্রিদির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগও উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর আফ্রিদি হঠাৎ করেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে সংসার করার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তার।

ওই নারী আরো বলেন— ‘আমার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে উল্টো আফ্রিদি আমাকে হুমকি দেয়। মুনিয়ার মতো আমাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি জানতে পারি, তার একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে। সরাসরি না বললেও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়, মুনিয়ার মতো আমারও পরিণতি হবে।’

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -