আজ মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে থমকে আছে সচিব পদে পদায়ন!

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিনিধি, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি ও প্রশাসনে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী আমলাদের সমন্বয়হীনতায় শূন্য থাকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদায়ন প্রক্রিয়া থমকে আছে। এতে মন্ত্রণালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবার প্রভাবশালী আমলাদের ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের সুবাদে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার পছন্দের কর্মকর্তা না হওয়ায় সেই কর্মকর্তার যোগদানে আপত্তি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা।

এমন ঘটনায় গোটা প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে। যে কারণে দলনিরপেক্ষ মেধাবী এবং দক্ষ কর্মকর্তারা যোগ্য হয়েও সচিব পদে নিয়োগ পাচ্ছেন না তারা। এখানে যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনে চাউর আছে। অথচ ছাত্রজনতার-গণভ্যুত্থানের পর বিগত শেখ হাসিনার সরকারের ‘ব্যক্তিগত পছন্দ’ রীতি থেকে বেরিয়ে এসে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞদের পদায়ন করার কথা। কঠিন সময়ে সমস্যা মোকাবিলায় পারদর্শী ও নেতৃত্বদানের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। সেই আগের আওয়ামী লীগ সরকারের মতো শীর্ষ পদগুলোয় পদায়নে ব্যক্তিগত পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তার পরিণতি ভোগ করছে সমগ্র জনপ্রশাসন। জনপ্রশাসনকে সুসংগঠিত করার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা তারা দেখাতে পারেনি বলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা অন্তর্বর্তী সরকারে শীর্ষ মহলে অভিযোগ করেছেন।

গত কয়েক মাস আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নবম ব্যাচের বঞ্চিত এক কর্মকর্তাকে সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতিসহ পদায়নের সারসংক্ষেপ অনুমোদিত হলেও সেই কর্মকর্তাকে সচিব পদায়ন করা হয়নি। রহস্যজনক কারণে জনপ্রশাসনে ফাইল আটকে থাকায় অবসর নিয়ে চাকরি থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। অথচ ওই কর্মকর্তাকে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর প্রফেসর ইউনূসের পরামর্শে রাষ্ট্রপতির আদেশে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয় তখন। পরবর্তীতে তাকে সিনিয়র সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই কর্মকর্তা প্রশাসনে মেধাবী ও বঞ্চিত কর্মকর্তা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে মামলাসহ অন্যান্য অভিযোগ এনে পদে পদে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে।

ন্যায্যতা ফিরে পেতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের দ্বারে দ্বারে তিনি ঘুরেছেন। তারপরও তার পদোন্নতির আদেশ কার্যকর হয়নি। শুধু তিনি নন, আরও অনেকেই যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সখ্য না থাকায় সচিব হতে পারছেন না এখনো। বরং বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের সচিব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন এমন কর্মকর্তাকে তার মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) লিখেছিলেন। কিন্তু ডিও লেটারের উল্লিখিত কর্মকর্তার বদলে অন্য কর্মকর্তাকে সচিব পদায়ন করায় সচিব হয়েও তিনি এখনও যোগদান করতে পারেননি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনও সুরাহা করতে পারেনি। এক্ষেত্রে সমস্যা নিরসন করতে হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বঞ্চিত ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা। সেটি না হলে কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে।

- Advertisement -

সূত্রগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সচিব পদে নিয়োগ দিতে সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বদলি-পদায়ন ও পদোন্নতি বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টাদের পছন্দ না হলে সে সচিবের নিয়োগ হচ্ছে না। আবার প্রভাবশালী আমলাদের পছন্দের কর্মকর্তা না হলেও একই ঘটনা ঘটছে। যে কারণে গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে মাসের পর মাস সচিব না থাকলেও সচিব পদায়ন বা নিয়োগ হচ্ছে না। পদায়ন নিয়ে রেষারেষি অব্যাহত রয়েছে । সেই বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলের মতোই চলছে প্রশাসন। আগের সিন্ডিকেটের কব্জায় জনপ্রশাসন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। বিগত সময়ে অতিমাত্রায় দলীয়করণ এবং জনপ্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতির লাগামহীন বিস্তারের কারণে জনপ্রশাসন পরিণত হয়েছিল একটি অকার্যকর জনপ্রশাসনে। এর প্রভাব এখনও বিরাজ করছে বলে বিগত সময়ে বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আনোয়ার ফারুক দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনকে বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজই হওয়া উচিত ছিল সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ভঙ্গুর ও অস্থির জনপ্রশাসন সুসংগঠিত করা। এরপর বিরাজমান অস্থিরতা দূর করে জনস্বার্থে জনপ্রশাসনকে কাজে লাগানো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য যে রকম দূরদর্শিতা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল, তাতে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। প্রয়োজন ছিল দূরদর্শিতা ও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গে জনপ্রশাসনকে সাজানোর।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে বেরিয়ে এসে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ এবং ক্রাইসিস মোকাবিলায় পারদর্শী ও নেতৃত্বদানের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়ন করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। শীর্ষ পদগুলোয় পদায়নে ব্যক্তিগত পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরিণতি ভোগ করছে এখন সমগ্র জনপ্রশাসন। জনপ্রশাসনকে সুসংগঠিত করার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা তারা দেখাতে পারেননি। তাদের অনেকের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিরও অভাব।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সচিব, সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার পদ রয়েছে ৮৪টি। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১৭ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে রয়েছেন। এর আগে শীর্ষ পদে একসঙ্গে এতসংখ্যক কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি। অন্যদিক সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে মোট ওএসডি আছেন ১২ জন। তবে বর্তমানে অন্যান্য পদে প্রশাসনে সব মিলিয়ে ৫ শতাধিকের ওপরে ওএসডি কর্মকর্তা রয়েছেন।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি  

- Advertisement -
- Advertisement -