আজ রবিবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ১০ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বারাক ওবামা একটা নোবেল পেলে ট্রাম্প কেন দুইটা নোবে*ল পাবেন না!

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

আলোকিত ডেস্ক, নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে পৃথিবীতে অশান্তির শেষ নেই। অর্থনীতিতে নোবেল নিয়েও নানান ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বাজারে প্রচলিত আছে। সাহিত্য নিয়েও বিতর্কের অন্ত নেই। তবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য কাড়াকাড়ি একটা দেশের এমনকি বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও ঘোলা করে তুলতে পারে। বাংলাদেশেও একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আছেন। তিনি কেন পুরস্কার পেয়েছেন, এই কারণে অরেকজন শান্তি পুরস্কারলোভীর ক্ষোভের আগুনে অনেকদিন জ্বলেছেন। আপাতত সেই ক্ষোভের আগুন থেকে রেহাই পেয়েছেন আমাদের নোবেলবিজয়ী। অবশ্য এরই মধ্যে দেশে রীতিমতো একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটে না গেলে পরিস্থিতি কী হত, বলা মুশকিল।

যুক্তরাষ্ট্রে ডনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খায়েশ অনেক দিন ধরেই আছে। তার হিংসার শুরু বারাক ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে। বর্তমানে তিনি তার হিংসা চরিতার্থ করার কাছাকাছি চলে এসেছেন। নোবেল পুরস্কারটা তার হাতে খসে পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়ার জন্য যত লোক ওকালতি করছেন, তা ইতিহাসে আর কারো জীবনে ঘটেনি। সুতরাং ট্রাম্প নোবেল না পেলেও নোবেল পেতে চাওয়ার ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে! আর তিনি নোবেল পুরস্কার পাবেনই বা না কেন? ওবামা একটা পেলে ট্রাম্পের দুইটা পাওয়া উচিত।

সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার একখান নোবেল অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু ওরা এটা ঠিকমত দেয় না।

জানুয়ারি ২০২০-এ তিনি অভিযোগ করেন যে, ইথিওপিয়াকে বাঁচালেন তিনি, আর নোবেল পুরস্কারটা পেল কিনা ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমি একটা দেশ বাঁচালাম, আর শুনলাম দেশটাকে বাঁচানোর জন্য কৃতিত্বের পুরস্কার পেলো ওই দেশের প্রধান।”

- Advertisement -

২০২৪-এর অক্টোবরে তিনি বলেন, “আমার নাম ওবামা হলে আমি ১০ সেকেন্ডের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পেতাম।  কিছু না করেই সে নোবেল পেল, খালি নির্বাচনে জিতল বলে। এখন আমিও কি জিতি নাই?”

এ বছর জুনে বলেন, “আমি একটা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধের জন্য। আমি একটা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না সার্বিয়া ও কসোভোর যুদ্ধ বন্ধের জন্য। আমি একটা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে শান্তি আনার জন্য। … রাশিয়া-ইউক্রেইন আর ইসরায়েল-ইরানসহ আমি যাই করি না কেন, আমাকে একটা নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হবে না, ফলাফল যাই হোক। কিন্তু লোকজন তো জানে, তাতেই চলবে।”

একটা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার এই তীব্র বাসনার কথা জেনে এখন যুদ্ধরত বিপরীত মেরুর উভয় পক্ষই তাকে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করতে শুরু করেছে। একপক্ষ চাচ্ছে তার গালে ললিপপের মত একটা নোবেল পুরস্কার ঢুকিয়ে দিয়ে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাকসের কথা যিনি বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে ট্রাম্প কোনো পদক্ষেপ নিলে তিনি নিজে নোবেল কমিটির কাছে যাবেন তাকে একটা পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। আবার আরেক পক্ষ চাচ্ছে তার সমস্ত যুদ্ধবাজ কর্মকাণ্ডকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে ধুয়েমুছে বৈধতার আবরণ দিতে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে তার গণহত্যায় সহযোগী হিসেবে রাখতে এই ৭ জুলাই তাকে একটি চিঠি উপহার দেন যা তিনি নোবেল কমিটির কাছে লিখেছেন ট্রাম্পকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য। ট্রাম্প বলেন, “ধন্যবাদ। আমি তো জানতামই না। ধন্যবাদ, বিশেষ করে আপনার কাছ থেকে এটা পাওয়ার জন্য, এটা বিশেষভাবে অর্থবহ।”

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নেতানিয়াহু কর্তৃক ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব আসলেই বিশেষভাবে অর্থবহ, ঐতিহাসিকও! কারণ পৃথিবীতে এই প্রথম ৬০ হাজার ফিলিস্তিন নাগরিক হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার এক আন্তর্জাতিক সহযোগীর নাম প্রস্তাব করছেন। পেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেননা ওবামা পেলে ট্রাম্পেরও প্রাপ্য।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের জন্য দুটি নোবেল পুরস্কারের দাবি উঠেছে খোদ হোয়াইট হাউস থেকেই। সম্প্রতি ৩১ জুলাই ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন নেতৃত্বের জন্য ট্রাম্পকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত।” এর ছয় ঘণ্টা পর আবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারেলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ছয় মাসের শাসনে পৃথিবীতে মাসে একটা করে শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতি সম্পাদন করেছেন। তার আরও আগেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিলো।”

সবশেষে তিনি প্রস্তাব করেছেন নোবেল পুরস্কারের নাম পাল্টে ট্রাম্প পুরস্কার রাখলেই ঝামেলা চুকে যায়! মেক্সিকো উপসাগরের নাম পাল্টে তিনি রেখেছেন আমেরিকা উপসাগর। নোবেল পুরস্কারের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে হলে এতদিনে যে তাই হয়ে যেত এতে সন্দেহের কোনো কারণ নেই।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -