জাহিদ হাসান হৃদয়:
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলবে এবং গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলের। এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি, আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। এদিকে সরকার ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটবে: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলবে এবং গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলের । এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি এই নির্বাচনকে সফল করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এবং একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গঠিত সত্যিকারের প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের। এ সময় বিএনপিসহ যে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, শহীদ, আহত বা পঙ্গু হয়েছেন-তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি মহাসচিব। এদিকে সরকার ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক, জুলাই সনদ অপূর্ণাঙ্গ: এদিকে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি, আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বুধবার (০৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এখানে আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল। আমরা আশা করি যে, বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বিগত ১৬ বছরের জুলুম, নিপীড়ন, গুম-খুন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক স্বৈরশাসকের পতন দেখেছি, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনতার অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের ’২৪ এর সরকার পতনের যে দৃশ্য, সেটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এই কৃতিত্ব জনগণেরই। সকল রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক, হকার, শ্রমিক—শেষদিকে জুলাইতে এসে আন্দোলনটা এমন একটা সর্বজনীন রূপ লাভ করে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, আবারো যেন সেই দুঃশাসন ফিরে আসতে না পারে, দেশে ইনসাফপূর্ণ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েম হবে—সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল জনগণের। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আপামর জনসাধারণ। সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলন সংগ্রামের ঘটনাকে ধারণ করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদের দাবি সর্বমহলের। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সংলাপ করেছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল ৫ আগস্ট অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই; যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল; সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ জন্য ৬টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দুই পর্বের দুই মাসেরও অধিক কাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে, তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে সকল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল। সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তার আইনিভিত্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লিগাল ফ্রেম ওয়ার্কের ভিত্তিতে ৭০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুমোদন হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরদের মুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সকল স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মাঝে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে, তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে উল্লেখিত জনআকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নেই: এদিকে সরকার ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আখতার হোসেন বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জুডিসিয়াল কিলিং, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদের হত্যার বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের কথা এতে উল্লেখ থাকলে ঘোষণাপত্র পরিপূর্ণ হতে পারত। গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ আরো অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাসের এই পরতে আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ রেখে গেছে, সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করলে জাতির জন্য আরও গর্বের হতে পারতো। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী সময় ঘোষণা নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের আপত্তি নেই। তবে নির্বাচনের আগে বিচারকে দৃশ্যমান করা এবং সংস্কার করা এটি এই সরকারের কর্তব্য। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার প্রস্তুতি আমাদের দিতে হবে।
জুলাই ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটবে: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলবে এবং গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলের । এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি এই নির্বাচনকে সফল করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এবং একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গঠিত সত্যিকারের প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের। এ সময় বিএনপিসহ যে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, শহীদ, আহত বা পঙ্গু হয়েছেন-তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি মহাসচিব। এদিকে সরকার ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক, জুলাই সনদ অপূর্ণাঙ্গ: এদিকে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি, আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বুধবার (০৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই সনদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এখানে আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল। আমরা আশা করি যে, বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বিগত ১৬ বছরের জুলুম, নিপীড়ন, গুম-খুন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক স্বৈরশাসকের পতন দেখেছি, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনতার অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের ’২৪ এর সরকার পতনের যে দৃশ্য, সেটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এই কৃতিত্ব জনগণেরই। সকল রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক, হকার, শ্রমিক—শেষদিকে জুলাইতে এসে আন্দোলনটা এমন একটা সর্বজনীন রূপ লাভ করে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, আবারো যেন সেই দুঃশাসন ফিরে আসতে না পারে, দেশে ইনসাফপূর্ণ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েম হবে—সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল জনগণের। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আপামর জনসাধারণ। সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলন সংগ্রামের ঘটনাকে ধারণ করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদের দাবি সর্বমহলের। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সংলাপ করেছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল ৫ আগস্ট অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই; যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল; সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ জন্য ৬টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দুই পর্বের দুই মাসেরও অধিক কাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে, তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে সকল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল। সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তার আইনিভিত্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লিগাল ফ্রেম ওয়ার্কের ভিত্তিতে ৭০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুমোদন হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসরদের মুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সকল স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মাঝে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে, তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরে উল্লেখিত জনআকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নেই: এদিকে সরকার ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আখতার হোসেন বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জুডিসিয়াল কিলিং, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদের হত্যার বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের কথা এতে উল্লেখ থাকলে ঘোষণাপত্র পরিপূর্ণ হতে পারত। গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ আরো অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাসের এই পরতে আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ রেখে গেছে, সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করলে জাতির জন্য আরও গর্বের হতে পারতো। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী সময় ঘোষণা নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের আপত্তি নেই। তবে নির্বাচনের আগে বিচারকে দৃশ্যমান করা এবং সংস্কার করা এটি এই সরকারের কর্তব্য। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার প্রস্তুতি আমাদের দিতে হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/০৭ আগস্ট ২০২৫/মওম
- Advertisement -