আজ বুধবার, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৬ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’ স্ট্যাটাস, ফিরেই প্রবাসীর কাঁধে স্ত্রী-সন্তানে#র লা*শ

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

আলোকিত ডেস্ক, সুদূর ওমান থেকে প্রায় আড়াই বছর পর দেশে ফিরছেন মো. বাহার উদ্দিন। সেই আনন্দে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। অন্যদিকে তাকে বরণ করে নিতেও পরিবারে করা হয় নানা আয়োজন। তাকে বিমানবন্দরে আনতে যান তার স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীম, মা মোরশিদা বেগমসহ স্বজনেরা।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ফেরার পথে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় খালে। এতে প্রবাসী বাহারের মা-স্ত্রী-সন্তানসহ ৭ স্বজন প্রাণ হারান। বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর এলাকায় চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা (২৪), মেয়ে মীম (২), মা মোরশিদা বেগম (৫৫), নানী ফয়েজ্জুনেছা (৮০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০), ভাতিজি রেশমি আক্তার (৮), ভাতিজি লামিয়া আক্তার (৯)।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ দ্রুত গতিতে মাইক্রোবাসটি খালের পানিতে পড়ে যায়। এরপরই চালক খালের পানি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। বাহার উদ্দিনসহ পাঁচজন গ্লাস ভেঙে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকি সাতজন গাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা পানির নিচে ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে গাড়িটি রেকার দিয়ে উদ্ধার করে। একে একে উদ্ধার করা হয় সাতটি মরদেহ।

এদিকে দুর্ঘটনার আগে ও পরের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ছবি প্রবাসী বাহার উদ্দীনের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া। এতে লেখা ছিল ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার।’ দুর্ঘটনার পর তার ফেসবুক ওয়ালের সেই স্ট্যাটাসের কমেন্টস সেকশনে রবিন হাসান নামে একজন একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, সাদা ব্যাগে মোড়ানো একটি মরদেহ নিয়ে অপল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বাহার উদ্দীন।

- Advertisement -
এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পাড়া প্রতিবেশী ও নিহতের স্বজনরা। বাহার উদ্দিনের আত্মীয় মো. সুমন বলেন, কীভাবে এ শোক সহ্য করব জানি না। পুরো পরিবারটা শেষ। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

এদিকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর প্রবাসী বাহার উদ্দীনের বাবা আব্দুর রহীম বলেন, ‘ড্রাইভার বারবার ঝিমাচ্ছিল। আমরা কয়েকবারই বলেছি, তুমি গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনে ঘুমাও। সে বলে যে, না সমস্যা নেই; যাইতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘যাইতে পারব বলার পর রাস্তায় কয়েকবার এমন হয়েছে যে ঘুমাতে ঘুমাতে আবার ঝটকা দিয়ে সজাগ হতো। চৌমুহনী আসার পরও আমরা বলেছি তুমি দরকার হলে কতক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। আমাদের এভাবে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তোমার চোখে ঘুম বেশি। এভাবে বাংলাবাজার আসার পরও আমরা তাকে ঘুমাতে বলি। এরপর হঠাৎ ঘুম থেকে ঝটকা দিয়ে উঠে সে গাড়ি পাশের খালে ফেলে দেয়।’

আব্দুর রহীম বলেন, ‘গাড়িতে আমি, আমার ছেলে, আমার ছেলের বউ তিন জন, আমার শাশুড়ি, আমার স্ত্রী ও তিন নাতনী। এর মধ্যে আমরা ৪ জন বের হতে পেরেছি। বাকি সবাই মারা গেছে।’ চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চালক ঘুমিয়ে পড়ায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। চালকসহ গাড়িটিতে মোট ১৩ জন ছিল। চালক পালিয়ে গেলেও গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -