আজ শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

টাঙ্গাইলে সেতুর সঙ্গে সড়ক নেই, দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

-Advertisement-

আরো খবর

সাইফুল ইসলাম সবুজ:
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চিলাবাড়ী বাজারের পূর্বপাশে লাউজানা গ্রামে লৌহজং নদীর উপর সেতুর সঙ্গে সড়ক নেই। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলা পরিষদ ওই সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণের কাজে আসেনি। ফলে আশপাশের ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চিলাবাড়ী বাজারের পূর্বপাশে লাউজানা গ্রামে লৌহজং নদীর উপর জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সদর উপজেলা পরিষদ একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেসার্স প্রত্যুষ বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজটি বাস্তবায়ন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেতুর ভাগ্যে জোটেনি সংযোগ সড়ক। এতদাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসনে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ভোগান্তিই পোহাতে হচ্ছে।
ওই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে স্থানীয় বাইমাইল, কাগমারা, চর কাগমারা, বাসাখানপুর, চিলাবাড়ী, লাউজানা, ধরেরবাড়ী, যুগনী সহ প্রায় ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াত সহজতর হতো।
স্থানীয়রা জানায়, অনেকদিন ধরে লৌহজং নদীর উপর ওই এলাকায় একটি সেতুর প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় জনসাধারণের সেই কাঙ্খিত সেতুটি নির্মাণ করার পরও তাদের ভোগান্তি শেষ হয়নি। সরকার বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয়ে জনসাধারণের পারাপারের সুযোগ করে দিয়েছে। অথচ সামান্য কিছু টাকা বরাদ্দের অভাবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। ফলে দুর্ভোগেই রয়ে গেছে প্রায় ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।
আব্দুর রহিম জানান, সেতু নির্মাণের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে।কিন্তু সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ওই সেতু দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া নদীর দুই পাশের সেতুর ঢালে বসবাসরত মানুষ পায়েহেঁটেও চলাচল করতে পারেনা। তাদের বসতবাড়িতে যেতে হলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়।
তিনি জানান, সদর উপজেলা পরিষদ এতো টাকা খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করেছে। অথচ সামান্য কিছু টাকা বরাদ্দ করলে সহজেই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারে। সেতুর দুই পাশের ঢালে কিছু মাটি ফেলে চলাচলের জন্য উপযোগী করে দিতে পারে। সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এটা কর্তৃপক্ষের গাফলাতি ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে মনে করছেন তিনি।
এলাকার আবুল কাশেম জানান, নদীর ওপারে মসজিদ। মসজিদে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে যাতায়াত করেন। তিনি ১০-১২টি মাটির বস্তা সেতুর ঢালে ফেলে অতিকষ্টে যাতায়াত করেন। নদীর দুই পাশে রৌহজং নদীর দুই তীরে বড় বড় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দুটি হাট-বাজার রয়েছে। সেতুর ঢালে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে সহজেই এসব প্রতিষ্ঠানে চলাচলকারীদের জন্য সহজতর হবে।
স্কুল শিক্ষার্থী আবুল হাসেম, আনছার আলী, নাজমুল ইসলাম লিমা আক্তার সহ অনেকেই জানান, তাদের বাড়ি থেকে বের হলেই লৌহজং নদী, নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়েছে। ওই সেতু দিয়েই নদীর ওপারে যাওয়ার সহজতর একমাত্র মাধ্যম। সেতুর ওপারে ধরেরবাড়ী স্কুল। সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদেরকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে তাদেরকে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অথচ সেতুটি পার হলেই তাদের স্কুল।
নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রত্যুষ বিল্ডার্সের কর্ণধার প্রসেনজিৎ ধর জানান, সেতুটি নির্মাণের সিডিউল অনুয়ায়ী তারা কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছেন। উপজেলা পরিষদকে সেতুটি বুঝিয়ে দিয়ে তারা বিলের টাকা তুলে নিয়েছেন। সেতুর ঢালে সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে সিডিউলে কোনো উল্লেখ ছিলনা।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মুহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, সেতুটি উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণে বরাদ্দের চাহিদা উপস্থাপন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার জানান, সেতুটির সংযোগ সড়ক সম্পর্কে তিনি ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। জানতে পেরেই তিনি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটা প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে এ অর্থ বছরের প্রথমার্ধেই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/১৯জুলাই ২০২৫/মওম 
- Advertisement -
- Advertisement -