হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ টানা মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতে টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নিচু ঘরবাড়ি, কাঁচা রাস্তাঘাট এবং সবজিক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টেকনাফ আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ৩০ ঘণ্টায় ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪৬ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আরও ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে হ্নীলা, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, টেকনাফ সদর, সাবরাং, শাহ পরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন ও পৌরসভার অসংখ্য গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। টেকনাফ পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজসহ নানা স্থাপনা। এদিকে, টানা বৃষ্টির ফলে ঘরবাড়ি, পানের বরজ, বীজতলা ও সবজিক্ষেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে নীচু এলাকাগুলো দ্রুত প্লাবিত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রঙ্গীখালী এলাকার কামাল উদ্দিন বলেন আমার এলাকা পূর্ব রঙিখালী গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পানি বন্দী হয়ে জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছি। অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়, ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়, স্বাভাবিক জীবনযাপন হয়ে পড়ে অত্যন্ত দুরূহ। এই সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও গৃহীত হয়নি। আমরা কৃতজ্ঞ যে অনেক সময়ই শুকনো খাবার বা তাৎক্ষণিক সহায়তা পেয়েছি, তবে বারবার এই সাময়িক সহায়তা আমাদের সমস্যার মূল সমাধান নয়।
আমরা এখন আর শুধু ত্রাণ চাই না — আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, এবং এলাকার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।কাছে একটি স্থায়ী সমাধান চাই। আমাদের এলাকার মানুষ পরিশ্রমী ও সহযোগিতাপরায়ণ। প্রয়োজন হলে আমরা নিজেরাও পরিশ্রম করব, কিন্তু দয়া করে সরকারিভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করে পানি নিষ্কাশনের বা জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, টানা বর্ষণে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় মাছভর্তি পুকুর পানিতে ডুবে গেছে, অনেক জায়গায় মাছ ভেসে গেছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, ভারী বর্ষণের কারণে কিছু গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নামের তালিকা তৈরি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি