অর্ণব দাশ, ভারতঃ দিন-পঞ্জিকার পাতায় আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী।মস্তিষ্ক জানান দেয় আজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে পাক-হানাদার বাহিনীর বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন,যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার,সেসব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি / ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু,গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি / আমার সোনার দেশের,রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এই গানটি যেন আমাদের অস্তিত্বের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।দিনের প্রথম প্রহরে সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচিত এই গানটি গেয়ে প্রভাতফেরীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন।
বিশ্বের ১৮৮টি দেশে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে এই গৌরবময় দিনটি।তবে ১৯৫২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় কেবলমাত্র বাংলাদেশে।পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫২’র ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজন করা নানান কর্মসূচির।দিনের শুরুতে প্রভাতফেরী ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনে ছিল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একক ও দলীয় নৃত্য পরিবেশনা,গান,আবৃত্তি।পরবর্তীতে সচেতনতামূলক মঞ্চ নাটক ও বাংলা ব্যান্ডের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এই আয়োজনের।উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর (ড.) বিনয় কুমার মিত্তল,ই-গভর্নেন্সের সহকারী পরিচালক ড. জগদীপ সিং সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
দেশের বাইরে থেকেও এমন আয়োজনের অনুভূতি প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিতা চক্রবর্তী ও পূজা চক্রবর্তী বলেন,এবছরের মাতৃভাষা দিবসটা একটু অন্যরকম কেটেছে।আমরা চণ্ডীগড় ইউনিভার্সিটিতে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছি।প্রভাতফেরী শেষে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।এরপর সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করি,যা মুহূর্তটিকে আরও আবেগঘন করে তোলে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাঙালি শিক্ষার্থী মিলে গান ও নৃত্য পরিবেশন করি, যা অনুষ্ঠানে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।নিজের দেশ থেকে দূরে থাকলেও,এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেন স্বদেশের আবহ অনুভব করেছি। এটি ছিল এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা,যা আমাদের হৃদয়ে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসাকে আরও দৃঢ় করেছে।
অর্ণব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন,আমাদের এই মাতৃভাষা দিবসের মতো গৌরবময় দিনের এমন আয়োজনের জন্য আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই চন্ডীগড় ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ কে।পরবর্তী কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই জাবেদ ভাই,প্রিন্স ভাই এবং আবদুল্লাহ ভাই সহ যাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফলে আমরা আজ সফল একটা আয়োজন করতে পেরেছি।এই আয়োজন নিয়ে অনুভূতি প্রকাশের জন্য আসলে বলে শেষ করা যাবে না।দেশের বাইরে থেকেও আমরা উপলব্ধি করেছি এবং অন্যান্য দেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নানান কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।