এম জসিম উদ্দিন : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় রাজাকার কমান্ডার জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী প্রকাশ জউল্লার ছেলে মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ চৌধুরীর নাম মনোনীত হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারী ২০২৫ (সোমবার) আনোয়ারা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এই কমিটিতে ‘সংগঠক ও ছাত্র প্রতিনিধি’ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ১৯৭১-এ যুদ্ধকালীন আনোয়ারা থানা রাজাকার কমান্ডার জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা রাজাকারের সন্তান মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ চৌধুরী। এ নিয়ে সমগ্র আনোয়ারায় বিএনপি নেতা- কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক লেখক ও প্রকাশক সাংবাদিক জামাল উদ্দিনের লিখিত ‘আনোয়ারা একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকা গহীরা গ্রামের জালাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা রাজাকার ছিলেন যুদ্ধকালীন সময়ে আনোয়ারা থানা রাজাকার কমান্ডার।
জউল্লা ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ রাজাকার। গবেষক জামাল উদ্দিনের বই থেকে আরো জানা যায়, ৭১-এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ নয়মাস আনোয়ারার জনপদে স্বাধীনতাকমী যত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, যত গণধর্ষণ হয়েছে, জ্বালাপোড়াও হয়েছে সবই জউল্লা রাজাকারের হুকুমে হয়েছে। রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী প্রকাশ জউল্লা রাজাকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈরাগ ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস এবং সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আনোয়ারায়।
এই অঞ্চলে যত গণহত্যা, গণধর্ষণ, জ্বালাপোড়া হয়েছে সবই জউল্লা রাজাকারের নেতৃত্বে হয়েছে। তার ছেলে মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ আনোয়ারা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছে- এটি অত্যন্ত দু:খজনক এবং নিন্দনীয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি ব্যথিত হয়েছি। মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার আপন ভগ্নিপতি আবুল কালামের সাথে দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আবুল কালাম বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে তদ্বির করে বিগত ২০২৩ ইংরেজি সালে মুক্তিযুদ্ধ খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছেন আবুল কালাম।
তিনি বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগসুবিধা ভোগ করে আসছেন। আনোয়ারার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলোকিত প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আবুল কালাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখেননি। তাঁকে মাঠে কেউ দেখেনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কালাম বীরের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, এসব নোংরামির কারণেই বারবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে। মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ চৌধুরী আনোয়ারা ক্রীড়া সংস্থা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (চট্টগ্রাম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জাহেদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন কি-না এবং তিনি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান এসব প্রমাণিত হলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে পরামর্শ করে জাহেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, আনোয়ারা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য মনোনীত সদস্য স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান প্রমাণ পেলে তার সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি