মুহাম্মদ আবু আদিল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ দেশের পোল্ট্রি শিল্পে নতুন মাত্রা সংযোজন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে‘ফ্রেশ ফার্মার্স’। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পূর্ণ এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি উৎপাদন ও বাজারজাত করা। এখন পর্যন্ত ৮টি ব্যাচে মুরগি পালন করা হলেও কোনো ব্যাচেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। তাদের লক্ষ্য, ভোক্তাদের নিরাপদ মাংস সরবরাহের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করা। শুরু থেকেই তারা নিজস্ব ফিড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন।
উদ্যেক্তাদের একজন কৃষিবিদ মুহেব্বুর রহমান বলেন ” সেই স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বিজনেসের। এগ্রি সেক্টরে আরো স্পেসিফিকলি লাইভস্টক সেক্টরে কিছু একটা করবো। তবে কৃষির যেকোন সেক্টরেই স্পেশালি পোল্ট্রি সেক্টর এমন একটা সেক্টর যেখানে আসলে প্রচলিত বাজারের উপর ডিপেন্ড করে থাকলে টিকে থাকা অনেক কঠিন। আমরা তাই ভ্যালু এডেড পণ্যের দিকে ঝুকেছি। এবং এই পন্য সরাসরি ভোক্তাদের নিকট পৌছানোর মাধ্যমে সাস্টেইনেবল একটা সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি।”
আরেক উদ্যোক্তা কৃষিবিদ তাসনিম সিদ্দিকী বলেন -আপাড দৃষ্টিতে হুট করে জব ছেড়ে দিয়ে আমরা ব্যবসায় নামলেও এই ব্যবসার পিছনে আমরা একটা লম্বা সময় নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। বাজার এনালাইসিস করেছি। পোল্ট্রি বাজারটাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশে ব্রয়লার নিয়ে মাত্রারিক্ত নেগেটিভ ধারণা প্রচার হয় যা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে এন্টিবায়োটিক ইস্যু নিয়ে আমাদের খামারিদের এবং ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি। আমরা এই জিনিসটা নিয়েই বড় পরিসরে কাজ করার চেষ্টা করছি।
.
এ ব্যাপারে উদ্যেক্তাদের আরো একজন তড়িৎ প্রকৌশলী নিজামুল হক বলেন -” আমি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও কৃষির প্রতি ছোটবেলা থেকেই আগ্রহী ছিলাম। ২০১৯ এ চাকুরী ছেড়ে দিয়ে কৃষি নিয়েই পরেছিলাম। ব্যাক্তিগত ভাবে আমার গরু,মহিষ,ভেড়া আর ছাগলের খামার আছে। বড় পরিসরে কিছু করার জন্যে একটা প্রোপার টিমের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে মার্চ থেকে ফ্রেশ ফার্মার্সের যাত্রা শুরু করি। আমাদের ফার্মে আমরা প্রায় ৮০% বিদ্যুৎ সাপোর্ট পাই সোলারের মাধ্যমে যা আমাদের অপারেশন কস্ট মিনিমাইজেশনে সাহায্য করছে। আমরা সামনে বায়োগ্যাস সহ রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে আরো বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা করছি। ”
.
আরেক উদ্যেক্তা যন্ত্র প্রকৌশলী তৌসিফ রহমান বলেন -” একটি স্বপ্ন দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যেখানে ক্ষুধামুক্ত ও নিরাপদ একটি বিশ্ব থাকবে। সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ খাবারকে আরও সাশ্রয়ী করতেই আমদের এ প্রচেষ্টা। কারণ তাদের অনেকের কাছে সেই খাবার ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই, যা বেশিরভাগ মানুষ এড়িয়ে চলতে চায়। মানুষ যখন নিরাপদ খাবার খেতে পারে না, তখন তারা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বর্তমানে ফ্রেশ ফার্মার্সের উৎপাদিত মুরগির বড় একটা অংশ নিয়মিতভাবে বেঙ্গল মিট সংগ্রহ করছে। ঢাকায় হোম ডেলিভারি সহ বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী এবং চিটাগাং এও তারা মুরগি পাঠাচ্ছে নিয়মিত। পাশাপাশি বিভিন্ন সুপার শপ এবং নিরাপদ খাদ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মুরগির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে।
উদ্যোক্তারা জানান, এন্টিবায়োটিক কোনো খারাপ জিনিস নয়, তবে প্রপার ডোজ এবং উইথড্রয়াল পিরিয়ড ফলো না করলে এটি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাদের লক্ষ্য এমন একটি খামারি কমিউনিটি গড়ে তোলা, যারা পুরো এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি উৎপাদন করতে না পারলেও অন্তত এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ মুক্ত মুরগি উৎপাদনে সক্ষম হবে। প্রপার ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল অনুসরণ করলে এটা করা সম্ভব।
ফ্রেশ ফার্মাস শিক্ষিত তরুণদের পোলট্রি সেক্টরে আকৃষ্ট করতে এবং স্থানীয় খামারিদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র উৎপাদন ও বিপণন চ্যানেল তৈরির পরিকল্পনা করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ মুরগি সরবরাহ করবে।