মোঃ সোহাগ (বিশেষ প্রতিনিধি): রাস উৎসব উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে হাজার দশকের ভিড় জমিয়েছে হাজারো নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের ধর্ম বলি রাস উৎসব উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছে হাজারো নারী-পুরুষ। সকল জাগতিক পাপ মোচনের আশায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাস উৎসব। সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম এ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গতকাল বিকেল থেকেই সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছে হাজারো নারী-পুরুষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটার শ্রী শ্রী রাধাকৃঞ্চ মন্দিরে ভগবানকে আমন্ত্রণ, মঙ্গলঘট স্থাপন, সন্ধ্যা আড়তি, আলোচনা সভা এবং ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। রাতভর চলে সঙ্গীতানুষ্ঠান, ভাবগত পাঠ ও মাহনাম কীর্তন।
শনিবার ভোররাতে পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। তবে পূর্ণিমা চলমান থাকায় ভোরে মতুয়াসহ অনেক হিন্দু সম্প্রদায় গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন। এদিকে কলাপাড়ায় শুরু হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
শহরের মদনমোহন সেবাশ্রমে ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা দর্শনের মাধ্যমে এ রাসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় শাঁক, উলুধ্বনি এবং নাম কীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ। পঞ্জিকা মতে বৃহস্পতিবার ভোররাত ৫টা ৪৩ মিনিটে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা। থাকবে পরদিন শুক্রবার ভোররাত ৩টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। সৈকতে আগত পুণ্যার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে নিযুক্ত ছিলো বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। জানা যায়, মানবতা রক্ষায় দ্বাপর যুগে কংস রাজাকে বস করে পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে রাধা-কৃষ্ণের পরম প্রেম। সেই থেকেই মূলত রাস উৎসবের প্রচলন হয়। তবে সত্য ও সুন্দরের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব উদ্যাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
খুলনা থেকে আসা পুণ্যার্থী সজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আজ সকালে এখানে এসেছি। পরিবারের সব সদস্য আমার সঙ্গে রয়েছে। আগামীকাল পূর্ণিমা তিথিতে আমরা গঙ্গাস্নান করবো। তবে এ বছর এখানে আসলেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দুবলার চরে রাস উদ্যাপন করেছি।’
বরিশাল থেকে আসা পুণ্যার্থী সম্রাট কর্মকার বলেন, ‘রাতভর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে। এ অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে পুণ্যস্নান করবো। তাই প্রতি বছরের ন্যায় বছরও কুয়াকাটায় আসা। আসা করছি পূণ্যস্নানের মাধ্যমে সকল জাগতিক পাপ দূর হয়ে যাবে।’
রাস উৎসবে অংশগ্রহণ করা সৌমির বলেন, ‘সারা বছর অপেক্ষা করি এ দিনটির জন্য। আমি ৫ বছর ধরে স্নানে আসি এবং আমি আমার মানত করা পূজা দেই গঙ্গায়। যাতে গঙ্গা মা আমাকে মঙ্গল করে।’
বছরও পূর্ণিমা তিথিতে হাজারো তীর্থ যাত্রীদের পদভারে মুখরিত হচ্ছে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এমনটাই বলেন কুয়াকাটা রাসপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরন দাস।
কুয়াকাটার শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নেহের রঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘গতকাল থেকেই আমাদের এখানে ব্যাপক পুণ্যার্থী এসে উপস্থিত হয়েছে। আজও অনেকে আসছে। আমরা রাতভর এখানে পূজার্চনাসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পুণ্যার্থীদের চাপ একটু বেশি।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবীবুর রহমান বলেন, ‘গতকাল থেকেই পুরো কুয়াকাটা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কোনো দুষ্কৃতকারী যেন কোনো সমস্যা না করতে পারে সে বিষয় সজাগ রয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছর ধরে চলে আসা রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষ্যে আমরা ধারণা করছি তিন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। কুয়াকাটায় পূণ্যস্নানে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা, উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিক থানা-পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, টুরিস্ট পুলিশ এবং গ্রাম পুলিশসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।’
আলোকিত/১৬/১১/২০২৪/আকাশ