কামাল হোসেন, গাজীপুর সদর
কথা সাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিনে তার পরিবার এবং ভক্তদের ভালবাসা শ্রদ্ধায় পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের হতে গড়া নুহাশ পল্লীতে নানা আয়োজন করা হয়। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমায়।
নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বুধবার মধ্য রাত ১২টা ১মিনিটে নুহাশ পল্লীতে এক হাজার ৭৬টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে পুরো নুহাশ পল্লী আলোকিত হয়ে উঠে। পরে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করে। সকালে নুহাশ পল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত।
পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী নুহাশপল্লীতে আসেন। শাওন তার দুই ছেলে, পিতা এবং নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হুমায়ুন ভক্তদের নিয়ে তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারা নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় হুমায়ূন আহমেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন। এসময় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ও হুমায়ুন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। কবর জিয়ারত শেষে বেলা ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের ম্যূরালের সামনে আপেল গাছ তলায় দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিনের কেক কাটেন মেহের আফরোজ শাওন। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এসময় শতাধিক হুমায়ূনভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বলেন, নুহাশ পল্লীটা হুমায়ূন আহমেদ করেছিলেন গাছ লাগানোর জন্য। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন বাংলাদেশের মাটিতে হয় এমন সমস্ত গাছ এখানে থাকবে। গাছের প্রতি প্রেম ও ভালবাসার কারণে নুহাশ পল্লীটা তৈরী হয়েছে। যখন যেখানেই দূর্লভ কোন গাছ পাওয়া যায় তা আমরা সংগ্রহ করে নুহাশ পল্লীতে রোপন করি। নুহাশ পল্লীর পরিচয় হচ্ছে গাছের মাধ্যমে। তাই নুহাশ পল্লীকে নিয়ে নতুন করে কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।
তিনি জানান, নুহাশ পল্লীতে একটি স্যুটিং ফ্লোর ছিল সেটি এখন অচল হয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কিছু কাজ ওই ফ্লোরে করা হয়েছিল। এখন সেটিতে কোন কাজ করা হয় না। তাই, এটি এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।
ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল আরো জানান, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারেও হলুদ পাঞ্জাবী ও শাড়ি পড়ে একদল হিমু হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। গাজীপুর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ভেতরে পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত নুহাশ পল্লী। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ নানা বয়সী ভক্তরা। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। তারা হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে সাজানো গোছানো নুহাশ পল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নুহাশ পল্লীতে আসেন তাদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের সমাধিস্থলে। তারা ঘুরে দেখেন নুহাশ পল্লী পুরো এলাকা।
উল্লেখ্য, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে লিচু তলায় তাকে সমাহিত করা হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি