এমএইচ চৌধুরী:
‘আপনি আমার মায়ের পেটের ভাই, ভাই নিউজটি প্রকাশ করবেন না আমি ক্যান্সারের রোগী। আসলে আমি কিছুই জানিনা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে কিছু মানুষ। নিউজটি প্রকাশ করলে ভাই আমার সমস্যা হবে’। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অত্যন্ত সূচতুর ঢাকা আগারগাঁও কর ভবনের সিপাহী কামরুল হাসান। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার মুগাইরপাড়া গ্রামে তার জন্ম। অত্যন্ত বিনয়ী ও অসহায়ত্বের সাথে কথাগুলো বললেও কামরুল হাসান চলেন রাজকীয়ভাবে। চাকুরীতে প্রবেশের অল্পকয়েক দিনের মাথায় হাতে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। বেশভূষায় এখন কেই বলবেইনা যে সে একসময় দরিদ্র পরিবারের বেড়ে উঠেছে। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে করেছে সম্পত্তির পাহাড়। তার সাথের সিপাহীরা যেখানে সংসার চালাতে হিমশীম খাচ্ছে সেখানে কামরুল হাসানের সম্পত্তি দিন দিন বেড়েই চলছে। কামরুল এখন গ্রামের মানুষের মুখে মুখে আলোচিত এক নাম।
অভিযোগ রয়েছে গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে তার শ্বশুর ও শ্যালকের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় তিনি বিনোয়োগের মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছেন।
ঢাকার মিরপুর সাড়ে এগারো পল্লবীতে তিনি কোটি টাকা খরচ করে এক আলিশান ফ্লাট ক্রয় করেন তার পরিবারের নামে। দুর্নীতি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই কামরুল হাসান অবৈধভাবে উপার্জনের টাকা দিয়েই করেছেন বিশাল সম্পত্তির পাহাড়। রাজশাহীতে মোন্নাফির মোড়ে কামরুল হাসানের নামে রয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমি। যার আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকার উপরে। কামরুল হাসানের পিতা মানুষের জমিতে খেটে সংসার চালাতেন। কিন্তু কামরুল হাসানের চাকরির সুবাদে অল্প কয়েক দিনেই গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলেন বিশাল এক আলিশান বাড়ি। তাছাড়া সূঁচতুর এই কামরুল হাসান শুধু নিজ পরিবারের নামের বাহিরে শ্বশুর শাশুড়ি শ্যালক সহ আত্মীয়স্বজনের নামে করেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। শশুর আবুল কালাম আজাদকে নিজ অর্থে তৈরি করে দিয়েছেন এক আলিশান বাড়ি, যার আনুমানিক খরচ প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। তাছাড়া বাজারে রয়েছে শ্বশুরের নামে মাছের দোকানসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একজন স্বল্প বেতনের সিপাহী কিভাবে এত কিছু করলেন। অভিযোগ আছে এলাকায় ঘুষবানিজ্য জমি জবরদখল ইত্যাদি কাজে সরাসরি মদদ ও তদবির করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে কামরুল হাসান। তাছাড়া শ্যালক সুজন ইসলামের নামের রাজশাহীতে তার বাড়ি করার খরচ বহন করছেন তিনি। শ্যালক সুজন ও শ্বশুর কে দিয়ে মাদক ব্যবসাও করেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ কামরুল হাসান এর মদদে তার শ্বশুর শ্যালক সবাই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষথেকে কামরুলের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে একটি অভিযোগও করা হয়। এবিষয়ে কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় এবং কথার একপর্যায়ে পল্লবীতে যে ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছেন তা স্বীকার করলেও ফ্ল্যাটটিয়ে তার নামে রেজিস্ট্রেশন করেননি তাও স্বীকার করেন। অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কামরুল হাসান তার শ্বশুর ও শ্যালকের মাধ্যমে সাধারন মানুষের জায়গাজমি ভয়ভিতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়। এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রনেও তার রয়েছে এক বাহিনী। অনিয়ম দূর্নীতি ছাড়া একজন সাধারন সিপাহী কিভাবে এত বিত্তবৈবভের মালিক হলেন কোন আলাদিনের চেরাগই বা পেলেন তা এলাকার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরী হয়েছে। সিপাহি কামরুলের শ্বশুর আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। পরবর্তী তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয় নিউজের বক্তব্য নেওয়া জন্য কল করা হয়েছে, তখন উল্টো সাংবাদিকদের মামলার আসামি করার হুমকি দেয়।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ১ম পর্ব…
আলোকিত্ প্রতিদিন/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- Advertisement -