এম. আর. কমল : সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ধারাবাহিক ফিরিস্তি উঠে আসছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কোনো কোনো মিডিয়া অতি উৎসাহী হয়ে অনেক ক্ষেত্রে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ভূয়া তথ্যের ভিত্তিতে সত্যাসত্য যাচাই না করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করছে। এতে একদিকে প্রকৃত দুর্নীতিবাজরা যেমন আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে কিছু ভালো ও পরিচ্ছন্নভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাতে ঐ প্রতিষ্ঠানই শুধু ক্ষতির মুখে পড়ছে না। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত এবং কর্মরত এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহও হুমকীর মুখে পড়ছে। এমনই একটি সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয় আমাদের এই প্রতিবেদকের। সংবাদটি ছিলো ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’-এর বিরুদ্ধে। সংবাদে উল্লেখ করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে উক্ত প্রতিষ্ঠানে। আমাদের এই প্রতিবেদক স্বপ্রণোদিত হয়ে উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’-এর কার্যালয়ে যান। তিনি কথা বলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন ও সেক্রেটারি ইমানুয়েল বাপ্পী মন্ডলের সাথে। তারা জানান- ‘একটি কুচক্রি মহল হাউজিং সোসাইটির উন্নয়নের এই সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সোসাইটির নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা হাউজিং সোসাইটির সদস্য নন এমন ব্যক্তিরাও সোসাইটির সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য নানারকম মিথ্যা, কুৎসা রটিয়ে উস্কানি দিচ্ছেন। যা হাউজিং সোসাইটির সদস্যদের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী।’ তারা এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে সদস্য ও শুভাকাঙক্ষীদের প্রতি জোরালো আবেদন জানিয়ে বলেন- ‘আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং যারা এ সকল হীন কাজগুলো করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি সোসাইটির উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরুন। সকল সদস্যদের প্রতি অনুরোধ আপনারা হাউজিং সোসাইটির কার্যালয়ে আসুন, স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিদর্শন করুন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।’
তারা আরো বলেন- ‘আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, হাউজিং সোসাইটির সকল প্রকার কার্যক্রম আইন, বিধি ও উপবিধি যথাযথভাবে মেনে বার্ষিক অডিট, বার্ষিক সাধারণ সভা পরিচালিত হয়ে আসছে। এই প্রতিষ্ঠান কারো ব্যক্তিগত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, এই প্রতিষ্ঠান হাউজিং সোসাইটির সকল সাধারণ সদস্য-সদস্যাদের। প্রকৃতপক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্য-সদস্যাগণই হাউজিং সোসাইটির মালিক। প্রতিষ্ঠানে খ্রিষ্টান সদস্য ছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোনো ব্যক্তির এখানে অর্থ গচ্ছিত রাখার বিধি-বিধান নেই। সেক্ষেত্রে উল্লেখিত শিরোনামে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো অর্থ বা সম্পদ এই প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত রাখার কোনো সুযোগ নেই। আরও উল্লেখ করতে চাই যে, হাউজিং সোসাইটিতে প্রতি অর্থবছরে সদস্যদের ডিভিডেন্ট ও রিবেট প্রদান করা হয়। এমনকি অত্র হাউজিং সোসাইটি সমাজে, স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক কাজে অবদান রেখে আসছে। এছাড়াও সারাদেশের সমবায় সমিতিগুলোর সঙ্গে হাউজিং সোসাইটির রয়েছে সৌহার্দপূর্ণ সুসম্পর্ক। তাই, অনতিবিলম্বে সোসাইটির নামে এই সকল অপপ্রচার বন্ধের জন্য আমরা জোরালোভাবে আহ্বান করছি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
পরে এই প্রতিবেদক চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির বক্তেব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তা এবং উক্ত সংস্থার বেশ কিছু সদস্যের সাথে কথা বলেন। তারা সকলেই বলেন- ‘এই প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি নেই এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কোনো টাকাও এ সংস্থায় গচ্ছিত নেই।’ তারপরও এই প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট এলাকার কতিপয় গণ্যমান্য মানুষের সাথে কথা বলেন। তারাও বলেন- ‘আমরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কখনো কোনো দুর্নীতির কথা শুনিনি।’ এ সংস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর গচ্ছিত টাকা আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন- ‘এখানকার সকল সদস্যই তো খৃষ্টান। আর তারা সদস্য ছাড়া অন্য কারো অর্থ গচ্ছিত রাখে না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো খৃষ্টান নন; তার টাকা এখানে কী করে থাকবে?’ কিছু সংখ্যক মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের কাছে প্রশ্ন করা হলে তাদের কেউ কেউ এমনও বলেন যে, ‘এই মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. ‘ প্রতিষ্ঠানটি এতোটাই খ্যাতি সম্পন্ন যে, এখানে যদি অন্য ধর্মের কারো সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে আমরা অনেকেই সদস্য হতাম’।
‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’ সংস্থাটি সরকারের যে দপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা সেই দপ্তর তথা সমবায় অধিদপ্তরে এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সমবায় অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান- ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ একটি সনামধন্য সংগঠন। তাদের নির্বাহী কমিটি খুব এ্যাক্টিভ ও সৎ। তাদের কোনো দুর্নীতি নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। তারা প্রতি অর্থবছরে সদস্যদের মাঝে ডিভিডেন্ট ও রিবেট প্রদান করে থাকে। সংস্থার অডিট রিপোর্ট অত্যন্ত ভালো।’
সুধী মহল মনে করেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের আগে বিষয়টি ভালোভাবে তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে তা প্রকাশ করা উচিত। অন্যথায় একজন ব্যক্তি যেমন সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হয় তেমনি সংবাদটি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার বিরুদ্ধে হলে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকীর মুখে পড়ে। সমাজের এমন অকল্যাণকর কর্ম থেকে সকলে সচেতন থাকবেন এটাই সর্বসাধারণের কাম্য।
আলোকিত/০৩/০৯/২০২৪/আকাশ
মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মেট্রোপলিটান খ্ৰীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ক্ষতি সাধনের চেষ্টা
-Advertisement-
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -