আজ রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আরিফ মিয়া ও জোনাস ঢাকীর দুর্নীতিতে ধ্বংসের মুখে ‘কালব’

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন হলেও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেক্টরগুলো এখনো পরাধীন রয়ে গেছে। সেখানে বিগত সরকারের মদদপুষ্ঠ কর্মকর্তা বসে আছে শীর্ষপদে। বীরদর্পে সে সকল কর্মকর্তারা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। সমবায় অধিদপ্তর এ অনিয়মের এক চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত। আমরা পর্যায়ক্রমে এ দপ্তরের  সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র প্রকাশ করবো। আজ তার প্রথম কিস্তি প্রকাশ করা  হচ্ছে- সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালনাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরার মাধ্যমে। যে চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। কী স্বার্থে সমবায় অধিদপ্তর এসব সহযোগিতা করেছে, সেসবও তুলে আনার চেষ্টা থাকবে আমাদের এই প্রতিবেদনে।
দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব): প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সমবায়ের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব) ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দুর্নীতির চক্রে পড়ে বেহাল হচ্ছে এর কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে তার সমবায়ী কার্যক্রম। বিগত সরকারের সময়ে বহু রাজনৈতিক নেতা স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধাও ভোগ করেছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১১টি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড ‘কালব’। পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের এবং গোষ্ঠীকেও এর সদস্যপদ দেওয়া হয়। কালব বিগত সাড়ে চার দশকে সদস্যদের দারিদ্র বিমোচনে রিসোর্ট, এগ্রো প্রজেক্টসহ নানা উৎপাদনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রয়েছে এর বিশালাকার নিজস্ব কার্যালয়ও। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের থাবার কবলে পড়ে আজ প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আর এর মূলহোতা হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া এবং সাবেক চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী বলে জানা গেছে। এ চক্রের অন্যান্যরা হলেন ভাইস-চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা, পরিচালক মোঃ আরিফ হাসান, পরিচালক মোঃ আঃ মন্নান লোটাস, পরিচালক নোয়েল চার্লস গমেজ, পরিচালক মোঃ হেলালউদ্দিন ও আশীষ কুমার দাশ।
এ চক্রের বিরুদ্ধে কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের উন্নয়নের অর্থ আত্মসাৎ, জমি ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, রিসোর্টের রুমভাড়া নিয়ে বিল পরিশোধ না করা, কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার এবং এর বারের লাইসেন্স বাবদ কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সাতজন সদস্য অত্যন্ত দূরভিসন্ধিমূলকভাবে চেয়ারম্যান মি. আগস্টিন পিউরীফিকেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও কাল্ব-এর মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে শ্লথ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। সূত্র আরো জানায় যে, মূলত প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহারে ব্যর্থ হতে দেখে তারা পদত্যাগ করেছেন।
এছাড়া ‘কালব’-এর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস কনসোর্টিয়াম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের মেয়াদকালীন সময়ে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ না পাওয়ায় এবং উপরোক্ত দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সমবায় সমিতি আইন-২০০১ (সংশোধিত-২০০২ ও ২০১৩)-এর ৪৮ ধারার পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে একই আইনের ৪৯ ধারায় তদন্ত হলে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা থেকে এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসা, কাল্ব কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত তদন্ত কার্যক্রম উদঘাটিত, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের বিষয়গুলো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মূলত উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা কমিটির ৭ (সাত) জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা এ প্রতিবেদকে জানান।
অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া ও জোনাস ঢাকী গং ও সহচররা নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে কালবের সফট্ওয়ার সংক্রান্ত চুক্তিতে চরম অনিয়ম, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম, কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, বিউটিফিকেশনের কাজ, পার্কিং, দেওয়াল ও ওয়াকওয়ে তৈরী, ওয়াশিংপ্ল্যান্ট, ইনডোর গেইমজোন, বেড, ম্যাট্রেস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ওয়াশিং মেশিনসহ নানা ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এমনকি আরিফ মিয়া কালব রিসোর্টে একটি সাজানো গোছানো রুম দিনের পর দিন নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। যেখানে অবৈধ কর্মকাণ্ডও সংগঠিত হতো। (চলবে)
আলোকিত/২৯/০৮/২০২৪/আকাশ

- Advertisement -
- Advertisement -