আজ রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ কবি মোজাফফর বাবুর শুভ জন্মদিন

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

দ্বীন মোহাম্মাদ দুখু:

আশির দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা, প্রেম ও প্রকৃতির আলোকিত কবি মোজাফফার বাবুর আজ শুভ জন্মদিন। কবি যশোর জেলার সদর উপজেলার দ্বান্দিক বস্তুবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষ মাস্টার ইমান আলি এবং শেফালী খাতুনের ঘর আলোকিত করে খড়কী সার্কিট হাউজ রোডের বাড়িতে ২৮শে আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই এবং এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। কবির পুরো নাম মোজাফফর হোসেন বাবু।
কবি মোজাফফর বাবুর পড়াশোনার হাতেখড়ি যশোরের খড়কির প্রাইমারি স্কুলে। পরে তিনি তৃতীয় শ্রেণীতে যশোর জেলা স্কুল ভর্তি হন সেখান থেকে ১৯৮০ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৮২ সালে যশোর পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইন কমার্স পড়েন। পরে ১৯৮৪ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন।
কবির পিতা ছিলেন জাতপাত ও শ্রেণীবৈষম্যের ঊর্ধ্বে একজন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী প্রগতিশীল চিন্তাধারার নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। যার দরুণ বহু রাজনৈতিক লোকের পদচারণায় মুখরিত ছিল কবির পৈতৃক নিবাস। কবির বাসায় বহুগুণী লোকের যাতায়াত ছিল। তার মধ্যে আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ইব্রাহিম খাঁ, শ্রী সুদির বাবু, প্রতাপউদ্দিন আহাম্মেদ , ডাক্তার এম এ করিম , শ্রী নারান মাস্টার ও শরীর প্রফেসর প্রমূখ। বাবা ইমান আলী মাস্টারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কবিও হয়ে উঠেন ছাত্রনেতা।
বাল্যকাল থেকে কবি সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন দিবসের রচনা ও নির্দেশনায় ’একুশের ডাক’, ’স্বাধীনতা’, ’বাংলার শহীদ মিনার’ শিরোনামের নাটক মঞ্চস্থ করেন। সংগঠক হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় ‘সাপ্তাহিক অন্যধারার সম্মাননা স্মারক ২০২০ লাভ করেন , ভিন্নমাত্রা ও বিভিন্ন অভিনয় আবৃত্তিতে পুরস্কার  লাভ করেন । এই প্রগতিশীল কবি ও ছাত্রনেতা নতুন সমাজ বিনির্মাণের    অঙ্গীকার পোষণ করে পলেটেকনিক ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইন কমার্স কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের বিপুল ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন এবং আশির দশকে ঢাকায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন । কবির আদি পরিবারও ছিল প্রগতিশীল। তার বড় চাচা ডাক্তার লুৎফর বিশ্বাস, মেজ চাচা মোহাম্মদ খেলাফত বিশ্বাসের হাত ধরেই ১৯৩৩ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মোঃ বেলায়েত হোসেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে: “জীবনের পথ চলায় আণবিক নয় ; স্বাস্থ্য কৃষি জীব-বৈচিত্র গুরুত্বপূর্ণ ইত্যাদি। কবিতার মধ্যে রয়েছে:  শিকড়ের সান্নিধ্যে, ময়নাতদন্ত, কফি হাউজের আবছায়া, খড়ায় পুড়ে মধ্যপ্রাচ্য, তখনো জর্জ ফ্লয়েড ইত্যাদি।
কবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমসময় ঘটনার উপর বাস্তব ঘটনার তথ্য উপাত্ত সহ মানব মনের অব্যক্ত কথা পৃথক পৃথক চিত্রকল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। উল্লেখযোগ্য লেখনী সমূহের মধ্যে রয়েছে: জীববৈচিত্র্য, প্রান্তিক অবহেলিত কৃষক, ঘাতক করোনাভাইরাস, চেতনায় মাস্টার ইমান আলী ইত্যাদি। সমাজে অবহেলিত মানবিক মূল্যবোধ অবক্ষয়, করোনাভাইরাসে অসহায়ত্ব জীবনের প্রকাশ পেয়েছে এ গল্পে।
কবির লেখা চমকপ্রদ কয়েকটি কবিতা হলো:
১. লাল সেঁকো চোখ
বসন্ত আসে শীত শীত পায়
টুনটুনির মা কি আসে যায়
রুটি নেই তবু ছুটি নেই তার
রক্তিম চোখ কর্মকর্তার

হোকনা তুফান ঝড়ঝঞ্ঝা
মড়ক মন্তর অকাল বন্যা
ঢুলুচোখ আর ক্লান্তিকর ঘামে
পড়ে থাকে বেদনার জ্বালে

স্বপ্ন বুনে নিত্য দিনের গল্পসল্প
ভাসবে হাজার রঙের চিত্রকল্প
শাসক শোষক এর বেড়াজাল
অনাদরে ঝড়ে যায় বসন্ত কাল

- Advertisement -

এ নিদারুণ ককষ্টের ইতিহাস
জানে গাছ গাছালী আর পথ ঘাট
কত দিন দেখেনি তারা ভরা রাত
অবাক জ্যোৎস্না ভরা মিষ্টি চাঁদ

তবুও লালন করে নতুন দিনের গান
আগুনে ফাগুনে আসুক নতুন প্রাণ
অন্ধকার সন্ধিহান ভরা পথ ঘাট
কবে শেষ হবে এই ক্ষুধাতুর রাত

২. কফিহাউসের আবছায়ায়
এক তুলতুলে নিগূঢ় সন্ধ্যায় কফি হাউজে দেখা হয়েছিল
কাঁচা হলুদের মতো আভা ছড়ানো তোমার শরীর জুড়ে ছিল
মেজেন্ডা রংয়ের শাড়ি
দারুন মানিয়েছিলো, দিব্যি করে বলছি
অপলক তাকিয়ে ছিলাম।

আবছায়া ঘেরা মিষ্টি মজমার পূর্ণিমার আলো গড়িয়ে
তোমাকে আরও সাজিয়ে তুলেছিল। যেন
গুচ্ছ গুচ্ছ শ্বেত অম্বর ভেসে যাচ্ছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে
সে পথচলায় তর্জনী ছুটছে আগামী দিনের ভবিষ্যতে

বসন্তের ফুরফুরে হাওয়ায় কৃষ্ণচূড়ার ফাগুন আগুনে
যেনো পুড়ে যাচ্ছে প্রিয়তমা তোমার ঠোঁট
হঠাৎ গুনগুনিয়ে উঠলে, আর তোমার লাল ঠোঁট
হয়ে উঠলো সমঅধিকারের প্রজ্বলিত মশাল হয়ে
বর্ণালী স্বপ্নগুলোকে, আশা আকাঙ্খা বাস্তবতাকে
ভরিয়ে তুললো অন্য আবেগে
বেখেয়ালি মন আমার ছুটতে ছুটতে আরও পেছনে
পেছন থেকে পেছনে সেই যৌবনে, সেই কিশোরবেলায় নিয়ে গেল
যেখানে তুমি আর আমি, আমি আর তুমি…

এখন তুমি আমি অনেক দূর
ভিন্ন অর্থে দু‘জনে দুই কূল

৩. উর্বর ভূমি
ধোঁয়াশা কুয়াশায় কাধেঁ নিখিল বলায়
অমল রোদ্দুর এখন বড়ই ক্লান্ত
পথের মাথায় সব গাছকে বানায় যিশু
দুর্বল মানব, রত্ন ভেবে সেবায় মগ্ন

পালসি ছাড়া মহীরুহকে করে ক্ষত বিক্ষত
চাতক দলকানা আর পরগাছা
ভাবি উড়োখোল পাখির মত উড়তাম
মুগ্ধতা ছড়াত স্বর্গের ফুল কন্যা

এখোন ও চিরচেনা পথঅজানা হয়
আজও সোচ্চার দূষিত দানবরা
নিউরনের মত জলপ্রপাত করে স্তব্ধ
সভ্যতা করে হত্যা বহায় রক্ত গঙ্গা

ওরা কলকে,তে গনগনে আগুন সাজায়
পাঠশালার স্বরলিপির দেয় বলি
প্রেত ভূমির পাশে বসে বাজায় ঝুমঝুমি
তিব্র লিস্পা আর দস্যুর প্রবৃত্তি

সফেদ চাদরের ভেতর উঠে দাঁড়াব
প্রতীক্ষা নয় খুলে ফেলব দস্তানা
জ্বলন্ত লাভায় ভস্ম হবে প্রভুর ছলকলা
শান্তি আসবে ফুটবে লাল কৃষ্ণচূড়া

কালজয়ী নজরুল লালনের সঙ্গীত
উদ্বেলিত স্পন্দন মিটায় আকাংখ্যা
কোজাগরী রাত অবাক জোসনা বাহাশ করে
পায় উর্বর ভূমি মুছে যায় আবর্জনা

৪. দুঃখগুলো চড়া
বৃষ্টি ধরছে ঝিরিঝিরি
তে মোড়ে ঐ কদম আলী
ভ্যানে ভর্তি সবজি হরেক
পকেটটা তার খালি।

চারিদিকে নিম্নচাপে
নেই ক্রেতার দৌড়ঝাঁপ,
পাখপাখালি হাট ঘাট নীরব
নেই বেচাকেনায় চাপ।

জীর্ণ শীর্ণ জীবন আজি
ধুয়াশাতে ভরা
স্বপ্নগুলো যায়না ছোঁয়া
দুঃখগুলো চড়া।

বর্ষণ চলছে অঝোর ধারায়
ভয়ার্ত এক তুফান
অমানিশাতে ভরা
জীবন যেন খান খান

দমকা হাওয়ায় প্রকৃতি আজ
অগ্নি রুদ্রমূর্তি
মুষলধারে বৃষ্টির কষ্টে
জীবন যেন পূর্তি।

পানি বাড়ছে হাটে ঘাটে
মেঠো পথে প্রান্তরে
পানি বাড়ছে কদম আলীর
চোখে ও তার অন্তরে।

নেই দাঁড়াবার জায়গা আজি
কদম আলীর দুখের দিন
জীবন আজি থমকে গেছে
ডাঙার উপর যেমনি মীন।

আলোকিত প্রতিদিন/২৮ আগস্ট-২০২৪ /মওম
- Advertisement -
- Advertisement -