স্টাফ রিপোর্টার:
রাজু এন্টারপ্রাইজ, তৌসিফ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মিয়া মোহাম্মদ খালেদ রাজু ও পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডাঃ নাজমূল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তারা মিলে মিশে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা।
ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডাঃ নাজমূল হক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তার জন্য হয়ে উঠে আলাদীনের চেরাগ। তিনি গড়ে তুলেন, রাজু এন্টারপ্রাইজ ও তৌসিফ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক আব্দুল খালেক রাজুর নেতৃত্বে বিশাল টেন্ডার সিন্ডিকেট। এই রাজুর সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো কাজই হয়নি এই হাসপাতালে। প্রতিটি টেন্ডার পেয়েছেন এই রাজু সিন্ডিকেট। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ২৩-০২-২০২৩ তারিখের ই-জিপি আইডি-৭৮১৫২ (Supply of Bakery and Confectionary) ৩ নম্বরে থাকা রাজুর প্রতিষ্ঠান হোসাইন সাকিক ইন্টারন্যাশনাল বিডি পায় ১ নম্বরে থাকা প্রিতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বেশিতে রাজুর প্রতিষ্ঠান হোসাইন সাকিক ইন্টারন্যাশনাল বিডিকে কাজ দেয়। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ২৩-০২-২০২৩ তারিখের ই-জিপি আইডি- ৭৮১৫২৭ (Supply of Vegetables) ৫ নম্বরে থাকা রাজু বাহিনীর প্রতিষ্ঠান রাহাত এন্টারপ্রাইজ ১ নম্বরে থাকা প্রিতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা বেশিতে কাজ দেয়। গত ২১-২২ অর্থ বছরের টেন্ডার নং-৬২৩৭১১ (Supply of Chicken Meat, Mutton, Fish & Chicken Egg), ৫ নম্বরে থাকা রাজুর প্রতিষ্ঠান হোসাইন সাকিক ইন্টারন্যাশনাল বিডি পায় ১ নম্বরে থাকা প্রিতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা বেশিতে রাজুর প্রতিষ্ঠান হোসাইন সাকিক ইন্টারন্যাশনাল বিডিকে কাজ দেয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ২৮-১১-২০২১ তারিখের ই-জিপি টেন্ডার আইডি- ৬২৩৭১২, ৬২৩৭১৩, ৬২৩৭১৪ এই তিনটা টেন্ডারের ওপেনিং রেজাল্ট এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। এমনকি সর্বশেষ ওডিএম টেন্ডার নং-০৪/২৩-২৪ টিও রাজু সিন্ডিকেট এর হাতে দিয়ে দেন ডাঃ নাজমুল। এই রাজুই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের হাত ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে প্রবেশ করেন। রাজু ও তার বাহিনীর আরো প্রতিষ্ঠান হলো ১. হোসেন সাকিক ইন্টারন্যাশনাল বিডি ২. মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ ৩. ওয়ারসী ইন্টারন্যাশনাল ৪. মেসার্স তাওসিফ এন্টারপ্রাইজ ৫. রাহাত এন্টারপ্রাইজ ৬. চিত্রা এন্টারপ্রাইজ।
ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও রাজুর বাহিনীর দৌরাত্ম ঢাকা মেডিকেলে এখনো বিদ্যামান। রাজুর কথার বাইরে কোনো কাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হয় না। এক কথায় বলা যায় ব্রিগ্রেডিয়ার নাজমুল হকের ডান হাত মিয়া মোহাম্মদ খালেদ রাজু যার কথায় আউটসোর্সিং লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে হেভি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, মেডিসিন সরবরাহ, রোগীদের খাদ্য সরবরাহ, রি-এজেন্ট সাপ্লাইসহ সকল কাজ তারই নির্দেশে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কঠিন শর্তাবলী দেয়া হয় প্রতিটি টেন্ডারে যা মিয়া মোহাম্মদ খালেদ রাজু ছাড়া কেউ শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা রাখে না। ডেইলি বেসিকের নামে চলছে লোক নিয়োগের রমরমা ব্যবসা। ব্রিগ্রেডিয়ার নাজমুল হকের চমকের শেষ নেই। যার নমুনা ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ ও অর্থ বছরের সব টেন্ডার ভাগ বাটোয়ারা করে ফেলেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব কাজ নিজের হাতে নিজের সিন্ডিকেট এর কোম্পানীকে দিয়েই থামেননি তিনি; সুকৌশলে আগামী ২ বছরের রোগীদের খাদ্যের টেন্ডার ভাগিয়ে নিতে এ বছরের ২৬ ডিসেম্বর নতুন টেন্ডার ঘোষণা করে ছুটি নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর আমেরিকা। যাতে নতুন ডাইরেক্টর দায়িত্ব বুঝে নিতে না পারেন এবং চলমান সাপ্লাই এর সকল কাজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন মালামাল বিক্রি এবং রোগীদের খাবার সরবরাহর সব কাজ শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে রাজু আর ডাঃ নাজমুল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ জন লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দৃশ্যমান হয়। বিগত দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচ পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৭৬ জন লোক নিয়োগে অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ৫ জন ওয়ার্ড মাষ্টার পদে পদোন্নতি দিয়ে জন প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজটি নিজের আয়ত্তে নিয়েছিলেন রাজু। প্রকাশ্যে কোনো টেন্ডার না হলেও রাজু এন্টারপ্রাইজ আউটসোর্সিংয়ের কাজ পেয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হয়। এরপর চাকরি প্রত্যাশীরা কিছু দালালের সহযোগিতায় কর্মচারি নেতা ও ঠিকাদার রাজু মিলে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা করে আদায় করেন। যারা একাধিক মাধ্যম হয়ে চাকরি নিতে এসেছেন তাদের গুনতে হয়েছে ২ লাখ টাকা করে। এ সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের ঘুষ বাণিজ্য যখন রমরমা; ঠিক সেই মুহূর্তে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন পারভেজ রানা নামে একজন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আউটসোর্সিং-এ জনবল নিয়োগে ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এরপরই দিশেহারা হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তায় লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেয়া লোকজন চিন্তায় পড়ে যান। যেসব মাধ্যমে তারা দিয়েছেন তাদের দ্বারস্থ হন টাকা ফেরত পেতে। এখন তারা আছেন সীমাহীন দুশ্চিন্তায়। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডাঃ নাজমুলের মুঠোফোনে বারবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খবর নিয়ে জানা যায় তিনি বর্তমানে আমেরিকাতে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে উপ পরিচালক ডা: খালেকুজ্জামানের সাথে বারবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। [দ্বিতীয় পর্ব আসছে]
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ আগস্ট-২০২৪ /মওম