আলোকিত ডেস্ক:
এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শুক্রবার রেকর্ড করা হলো দেশের সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ পঞ্চগড়সহ দেশের ১২ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। দেশে বেশ কয়েক দিন ধরে বয়ে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে। তবে আজ রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিন্তু বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, আগামীকাল তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়বে না। তবে এর পর থেকে বাড়তে পারে। আর রাজধানীর তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক সকালে বলেন, পঞ্চগড়সহ পুরো রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। রংপুর বিভাগ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও নওগাঁ জেলাতেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকে বলে গণ্য করা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আজ দেশের উত্তরের জনপদে শীতের প্রকোপ বাড়লেও রাজধানীতে তা খানিকটা কমেছে। বেড়ে গেছে এ শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আজ রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা কম হলেও ৩১ জানুয়ারির দিকে আবার বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, উত্তরের জনপদগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮, নওগাঁর বদলগাছির ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা উঠানামায় বেড়েছে কনকনে শীতের তীব্রতা। এদিকে বেলা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। কনকনে শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। এদিকে দেখা গেছে, তাপমাত্রার পারদ নেমে আসায় এবং শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেশী দুর্ভোগে ও বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষরা। শীতের তীব্রতায় অনেকেই ঘরবন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন।তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ভোর ৬টায় দেশের মধ্যে ও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরবর্তীতে এদিন সকাল ৯টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি হিম বাতাসের সঙ্গে কনকনে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জেলায় নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টির মত ঝড়ছে কুয়াশা। বিরূপ আবহাওয়ায় ও মাঘের শীতে দুর্ভোগের পাশাপাশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। এদিকে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার রেকর্ড রয়েছে। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি রেকর্ড রয়েছে। দেশের বড় এলাকাজুড়ে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। এবারে শীত বেড়েছে জানুয়ারিতে এসে। গত ১১ জানুয়ারি দেশের উত্তরের কিছু কিছু জেলায় শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিম হাওয়ার দাপট। জানুয়ারির ২০ তারিখের পর শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার বাড়তে থাকে। তীব্র ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে প্রায় পুরো দেশ। কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার খবরও মিলছে প্রায় প্রতিদিনই। হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়ও বাড়ছে। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। পারদ ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময় পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে সকাল ১০টায়।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ জানুয়ারি ২৪/ এসবি