আলোকিত ডেস্ক:
কোভিড মহামারির পর প্রথমবারের মত পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। দ্বাদশ শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮.৬৭ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারি আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া সেই পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এই হিসাবে ২০২৩ সালের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ৬৭৮ জন। ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও মহামারীর কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। কম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ; এক লাখ ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পায় জিপিএ-৫। আর ২০২০ সালে মহামারীর কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিকভাবে পাস করে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী পাঁচে পাঁচ জিপিএ পায়। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আজ রোববার সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান সরকারপ্রধানের হাতে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাউস চেপে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। বেলা ২টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ফল জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বরাবরের মত এসএমএসের মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে। ২০২০ সালে দেশে মহামারির প্রকোপে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তাদের মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করে, জিপিএ-৫ পান এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। ২০২১ সালের পরীক্ষা শুরুই হয় ডিসেম্বরে, যেখানে মহামানির আগে স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলে এ পরীক্ষা হত নিয়মিতভাবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়। ২০২২ সালের পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকলেও বন্যার কারণে তা আবার পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা নেওয়া হয় বিষয়, নম্বর ও সময় কমিয়ে। ফল প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। তিন বছর পর ২০২৩ সালে এসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা হয় ৭৫ নম্বরে। তবে এবারও বাগড়া দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এমনিতে প্রতিবছর সব বোর্ডের পরীক্ষা একসঙ্গে হলেও এবার প্রবল বৃষ্টি আর ঢলের কারণে তিন বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় দেরিতে। তবে ফল প্রকাশ করা হল একসঙ্গেই। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ অগাস্ট, শেষ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। আর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ১০ দিন পিছিয়ে ২৭ অগাস্ট শুরু হয়। জিপিএ-৫ কমল: চলতি বছরের (২০২৩) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। গতবারের পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪। পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে পাসের হারের এ তথ্য জানা গেছে। এবার সারা দেশে মোট পরীক্ষার্থী ছিল পৌনে ১৪ লাখ। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা ফলাফল পাওয়া শুরু করেছেন। প্রত্যাশিত ফল পেয়ে অনেক অভিভাবক ফেসবুকে খুশির খবর শেয়ার করছেন। কোন্ বোর্ডে পাসের হার কত: এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পাসের হার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে। ফলাফলে দেখা গেছে, এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী। শুধু ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এবার সবচেয়ে বেশি পাসের হার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৮০.৬৫ শতাংশ। এরপর ঢাকা বোর্ডে ৭৯.৪৪, রাজশাহী বোর্ডে ৭৮.৪৫, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৫.৩, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৪.৪৫, সিলেট বোর্ডে ৭১.৬২, ময়মনসিংহ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৭০.৪৪ এবং যশোর বোর্ডে ৬৯.৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯১.২৫ এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় পাস করেছেন ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেয়া সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসাবে এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন। গত ১৭ আগস্ট দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম, মাদ্রাসা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ২৭ আগস্ট। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ পরীক্ষার্থী।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ নভেম্বর ২৩/ এসবি