বিশেষ প্রতিনিধি:
সরকারী রাজস্ব ও পে-অর্ডার আত্মসাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ আতাউর রহমান। জানা যায় , ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ আতাউর দীর্ঘদিন যাবত দলিলের পে-অর্ডার আত্মসাৎ করে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, তিনি সরকারী নিষেধাজ্ঞাকৃত সরকারী কেয়ারি সম্পত্তির রেজিস্ট্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ধানমন্ডি অফিসে আসার পর ভ্যাট ও আইটির কাজ সম্পূর্ণ তার হাতেই ছিল। এই সুযোগে সরকারী পে-অর্ডার ভাঙ্গিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন । যার প্রমাণ উঠে আসে ২০২০ সালে। আতাউরের অপরাধ প্রমাণিত হয় সাব-রেজিস্ট্রার জনাব লুৎফর রহমান মোল্লার হাতে। তৎকালীন সময় জনাব লুৎফর রহমান মোল্লা লিখিত প্রমাণসহ জেলা রেজিস্ট্রার এর বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন এবং সে বিষয়ে দোষী প্রমাণিত হয় আতাউর রহমান কিন্তু তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রারকে অঙ্গীকার দিয়ে সমঝোতা করেন। এর পরেও থেমে নেই তার অপরাধ প্রবনতা। ২০১৮ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আলাদিনের চেরাগ যেন আতাউরের হাতের মুঠোয়। সূত্র জানায়, নকলনবীশ মোঃ আতাউর রহমান ধানমন্ডি অফিসে প্রতারণায় দক্ষ কারিগর হয়ে উঠেছেন। সকল অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে আতাউরের কাছে। হরহামেশাই বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় তিনি ৩০/০৫/২০২৩ সালে কোটি টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। যাহার দলিল নং- ৫৯৫৮ যা খিলগাঁও সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত। অনুসন্ধানে প্রতীয়মাণ হয়, ধানমন্ডি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের চাবি গোছা সরকারি কোন কর্মচারীর নিকট থাকার কথা থাকলেও নিয়ম বদলে চাবির গোছা থাকে আতাউরের হাতে, যার মাধ্যমে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের সরলতার সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চাকরিতে থাকাকালীন তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন এমনকি বাসা ভাড়া প্রদানেরও সাধ্য ছিল না। ধানমণ্ডি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কয়েকজন নকলনবীশ ও ওমেদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় অন্যায় করেও এই অফিসে পার পাওয়া যায়। এমনটাই দেখা যায়, মোঃ আতাউর রহমানের ক্ষেত্রে। তিনি ভলিউম ও নকল না লিখেও ডায়েরি করে মাসে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করার মত অপরাধ করছেন। এছাড়াও সরকারী পে-অর্ডার আত্মসাৎ করে স্বীয় অবস্থানে বহাল তবীয়তে আছেন। অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বেও আতাউর রহমানের এসব অবৈধ কাজ চালিয়ে যেতে কোন প্রকার ব্যাঘাত ঘটছে না, এমনকি এজলাস রুমে বসার জন্য তার আসনও আছে বহালতবিয়াতে। অফিসের ভাগের টাকাও ঠিকঠাক মতো পাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওমেদাররা আক্ষেপ করে বলেন, বড়ই দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় আতাউর রহমানের মতো অন্যায়কারী ঠকবাজদের বিচার হয় না অথচ অন্যায় না করেও অনেকের শাস্তি হচ্ছে। একবার অন্যায়কারীদের বিচার হলে দ্বিতীয়বার তারা অন্যায় করার সাহস পেতো না। অনুসন্ধানে আতাউর রহমানের কোটি কোটি টাকা কামানোর আরও কিছু উৎসের তথ্য উঠে আসে, ভুয়া নামজারী দিয়ে দলিল করা, খাজনা আদায়ের রিসিট ছাড়া দলিল করা, গৃহায়নের সেল পারমিশন বহিভূর্ত ফ্ল্যাটের দলিল করা, দলিলে ফিস দাগানোর ফলে অবৈধ কাজের দ্বারা অর্জিত বিপুল অর্থ যা দ্বারা তিনি নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এমনকি সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন নকলনবীশ আতাউর রহমান। অনুসন্ধানের গভীরে গিয়ে নকলনবীশ আতাউর রহমানের পূর্বের অফিস তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের কয়েকজন নকলনবীশের সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরানো মানুষ ছিল আতাউর। ধানমন্ডি অফিসে যাওয়ার পর শুনি আতাউর এহন কোটিপতি। আইএফআইসি ব্যাংকে তার মাস্টার আকাউন্টও আছে। এ যেন জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়ার গল্প। এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে আতাউরের পূর্বের এক সহকর্মী জানান, আমরা কিতা করলাম? শুনেছি ঢাকায় আহনের আগে আতাউর ব্র্যাক স্কুলের মাস্টারি করতো। প্রতিবেদনের আরো গভীরে গিয়ে এ প্রতিবেদকের নিকট উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য: অবৈধ ভাবে ইনকাম করা টাকা দিয়ে (১) আতাউর তার গ্রামের বাড়িতে ৮ বিঘা জমি কিনেছেন (২) মিরপুর ৬০ ফিট রোডে পাঁচ কাঠা জায়গা কিনেছেন (৩) ক্যান্টনমেন্ট মানিক দি বাইগারটেকে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন (৪) সাভারের আকরান বাজার ভাগ্নি বাড়ীতে টিনশেড বিল্ডিং সহ ১২ কাঠা জায়গা কিনেছেন (৫) রামপুরা পূর্ব চৌধুরীপাড়ায় কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, আতাউর রহমান ৫ বছরে ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এদিকে চোখ কপালে উঠার মতো তথ্য উঠে আসে এই প্রতিবেদকের হাতে। ধানমন্ডি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের গোপন তথ্য ফাঁস করে নকলনবীশ আতাউর রহমান হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। যা ২০২১ সালেও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয়। যেখানে কেরানি জয়নাল আবেদিনকে ওমেদারের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া তথ্য ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। সেই টাকার ভাগও আতাউর খেয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।
এ বিষয়ে জানতে আতাউর রহমানের মোবাইলে ফোন দিলে আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকার নাম শুনে হ্যালো বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন। এ প্রতিবেদক নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে আতাউর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপে এই প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে মন্তব্য জানতে চান। হোয়াটসঅ্যাপে সিন করার পর তিনি প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেন। বেতন বহির্ভূত কর্মচারী হয়েও কিভাবে এতো সম্পত্তির মালিক হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর প্রতিবেদককে উলটো প্রশ্ন করেন সম্পদ থাকা কি অপরাধ নাকি! পৈত্রিক সম্পত্তি কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আতাউর না বলেন। তাহলে কিভাবে সম্পদের পাহাড় গড়লেন পুনরায় এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান নিশ্চুপ থাকেন।
অন্যদিকে ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার জনাব আবুল হোসেনের বক্তব্য চেয়ে তাকে ফোন দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। তিনি সিন করেছেন, কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি। জেলা রেজিস্ট্রার এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন ধরেননি।হোয়াটসঅ্যাপে নিউজটি সিন করেছেন কিন্তু ফোন ধরেননি
আলোকিত প্রতিদিন/ ৩০ অক্টোবর ২০২৩/ দ ম দ