আজ শনিবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৯ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজনীতিতে চরম উত্তেজনার দিন

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

 

 

 

*দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থানে আতঙ্কিত নগরবাসী

- Advertisement -

 

আলোকিত ডেস্ক:

ইতিহাসের ভয়াল এক দিন ছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। ওইদিন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দিনে-দুপুরে বর্ণনাতীত নৃশংসতা দেখেছে বিশ্ব। সেদিন সরকার হঠাতে একদল লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। আরেক দল প্রস্তুতি নিয়েই তা ঠেকানোর জন্য মাঠে ছিল। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ভয়াবহ পরিণতি দেখেছিল বিশ্ব। ১৭ বছর পর একই ধাচে রাজপথে নামছে দুই দল। ফলে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধানে রাজপথ ছেড়ে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ বিশিষ্টজনদের। রাজনীতির মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে। আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে। আর বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী শাপলা চত্বরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। কোনো মতেই শাপলা চত্বরের সমাবেশ থেকে পিছুটান নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে দলটি। তবে জামায়াতকে কোনোভাবেই মাঠে নামতে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বলেন, ‘জামায়াত যেখানেই নামবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে পতনের বার্তা দিতে চায় বিএনপিসহ সমমনা জোট। অন্যদিকে সমাবেশের নামে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নৈরাজ্য চালাতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থানে আতঙ্কিত নগরবাসী। পাল্টাপাল্টি মহাসমাবেশের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সব জায়গায় একটাই আলোচনা, কী ঘটবে আজ। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির কারণে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক দিনমজুরসহ সবার মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বিপদে পড়তে পারেন এমনটিও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।  মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবুল কাসেম। শনিবার (২৮ অক্টোবর) অফিস থাকায় অনেকটা আতঙ্কিত তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর পল্টন ও মতিঝিল কেন্দ্রিক কর্মসূচি থাকায় মনে মধ্যে ভয় বিরাজ করছে। তিনি  বলেন, মিরপুরের বাসা থেকে শনিবার অফিস করা নিয়ে আমি চিন্তিত। যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকায় ঘোষণা দিয়েছে অফিস শেষ করে সুস্থভাবে বাসায় ফিরতে পারলেই হয়। এই ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নিরীহ মানুষ বিপাকে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। শেখ আব্দুল কামাল টঙ্গীর একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছুটি নিয়ে মিরপুরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন শনিবার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে কি না এই আশঙ্কায় ছুটির মধ্যেই শুক্রবার তিনি টঙ্গী ফিরে যাচ্ছেন। পরিবারের নিরাপত্তায় এমনটি করছেন বলে তিনি জানান।  কামাল  বলেন, আজই সড়কে যান চলাচল কম মনে হচ্ছে। রাজপথ উত্তপ্ত থাকবে তাই রিস্ক না নিয়ে পরিবার নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। চাকরিজীবীদের পাশাপাশি ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা গেছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন শনিবার তারা আড়ত থেকে সবজি আনবেন না, পরিস্থিতি বুঝে পরদিন (২৯ অক্টোবর) দোকানে মালামাল তুলবেন। এ ব্যাপারে মিরপুরের সবজি বিক্রেতা সবুজ  বলেন, বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজার থেকে যে মালামাল এনেছি,যতটুকু অবশিষ্ট থাকে শুক্রবারই তাই বিক্রি করবো। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির কারণে সড়কে যাতে ঝামেলায় পড়তে  না হয় এজন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সমাবেশের একদিন বাকি থাকলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত সমাবেশের ব্যাপারে কোনো অনুমতি বা অনুমোদন দেয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানেই তাদের সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।  এদিকে, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ বাস্তবায়নের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চালাচ্ছে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো। অপরদিকে, অনুমতি ছাড়া মহাসমাবেশ ঠেকানোর প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এই অবস্থায় প্রশাসন-রাজনৈতিক দলগুলো অনড় অবস্থানে আতঙ্কিত নগরবাসী। দিনটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তারা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। তবে রাজনৈতিক দলগুলো তাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি মধ্যে দিয়ে নগরজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর। এদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের ৯০ দিন শুরুর আগ মুহূর্তে এসব কর্মসূচি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সব মহল। বিএনপির ঢাকায় বসে পড়ার ভয় তাড়া করছে সবাইকে। কারণ দুই কোটি মানুষের এ শহরে রাস্তা বন্ধ করে বসে পড়লে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি রুখে দিতে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এদিন ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাগম করে বিএনপির রাজনৈতিক কবর রচনার হুমকি দিয়েছেন নেতারা। পাশাপাশি ঢাকা দখল করতে এলে ‘প্যাদানি’ দিয়ে বুড়িগঙ্গা পার করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সেখানে সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। একই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথা একটাই- দ্যা আনসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স, নট সাইলেন্স। আর কিছু না। আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘বিএনপি নামক দলটি মাহুত ছাড়া পাগলা হাতি। তাদের নেতৃত্বের ঠিক নেই। এটি যে কার কথা মতো চলছে, এটা কেউ বলতে পারবে না। তাদের আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতা হলো সহিংসতা। এখনো বিএনপির ওপর বিশ্বাস করা যায় না। তারা কী চায়? মানুষের মধ্যে কিন্তু আতঙ্ক আছে। তারা যে কথা বলছে, বা চাউর আছে- তারা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বসে পড়বে বা শহরকে কলাপস করে দেবে। এটা হলে তো জনজীবন বিপর্যস্ত হবে। তারা চায়, এ সরকারকে উৎখাত করতে। এ সরকার তো সামরিক সরকার না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকারকে উল্টে ফেলে দেওয়ার শক্তি কারো নেই। গত ১৫ বছরে এত পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ২৮ তারিখের আন্দোলন সফল করতেও শত কোটি টাকা খরচ করেছে। আমার বিশ্বাস, এটিও ফানুসে পরিণত হবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আমরা গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিশালী বিরোধী দল চাই। কিন্তু বিএনপি সঠিক পথে হাঁটছে না। তারা যে পথে হাঁটছে, সে পথে তাদের মরণ অনিবার্য। যদি তারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, নির্বাচন বা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে আওয়ামী লীগেরও অধিকার আছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়াবার। আমরা তাদের রুখে দেবো। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের এ আলটিমেটাম নতুন নয়। এর আগেও তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা চলমান অবস্থাতেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। ২০১৪-১৫ সালেও আলটিমেটাম দিয়েছে। গেল বছরের ১০ ডিসেম্বরেও তারা ঘোষণা দিয়েছিল। এগুলো মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। এ নিয়ে দেশের মানুষের কৌতূহল নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে, বা সরকার পতনের নামে কোনো সহিংসতা করে বা নাশকতা করে, তাহলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘২৮ অক্টোবর নিয়ে হুমকি, ধামকিতে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। সেদিন রাজপথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি থাকবে। যেকোনো ধরনের অরাজনৈতিক উদ্যোগ প্রতিহত করা হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের ওপর অর্পিত আইনানুগ দায়িত্ব পালন করবে। এদিকে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের জন্য বিএনপির কাছে সাতটি তথ্য জানতে চেয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত বুধবার রাতে দলটিকে যে চিঠি দিয়েছিল, তার জবাবে বিএনপি জানিয়েছে, নয়াপল্টন ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব নয় তাদের। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়ার পাঠানো চিঠির উত্তরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রুহুল কবির রিজভী পল্টন থানার ওসির কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় শুরু হয়ে মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে। সমাবেশে একলাখ থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে। সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সমাবেশের জন্য পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় এবং পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছুদূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে। ২৮ অক্টোবর সমাবেশে বিএনপির নেতারা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না। সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন যার সংখ্যা হবে ৫০০ জন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি তা নেতাকর্মীদের জানিয়েছি। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফাইট করছি কৌশলে। আমাদের নেতা তারেক রহমান কৌশলে এগিয়ে আছেন। সেজন্য জনগণের সমর্থনে এগিয়ে আছি, আন্দোলনেও এগিয়ে আছি, জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছি। আওয়ামী লীগ যে ধমক-টমক দিচ্ছে, এগুলো আমরা কর্ণপাত করব না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব। আমাদের ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ নির্ধারিত স্থানেই সফল করব। কে কোথায় করল, আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে, আমাদের ওপর আঘাত আসলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব। দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ‘বিএনপি সারা দেশে গণকর্মসূচি চালিয়েছে। ২৮ তারিখেও বিএনপি মহাসমাবেশ ডেকেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসবে। মানুষের ভোটের অধিকারের দাবি সরকারের কানে যাবে। সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে। সরকার যদি ২৮ অক্টোবর দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করেছিল, যা যা করেছিল, বিএনপিও তাই করবে। এদিকে ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরের সমাবেশ থেকে পিছুটান নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছ দলটি। ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মহাসমাবেশ সফল করতে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে। বিগত সময় অসংখ্যবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। সরকারের কোনো ধরনের উসকানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্র বিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশে প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দল তাদের কর্মূসচি কীভাবে, কখন, কোথায় করতে চায়- তা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পুলিশের কাছে দেওয়া দুই দলের চিঠি ইতিবাচকভাবে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। কমিশনার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিতে সমস্যা নেই। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তা হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। উদ্ভূত সংকটের সমাধানে বিশিষ্টজনরা বলছেন, এ পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা। তাদেরই এটির সমাধান করতে হবে। সংকটের সমাধান রাজপথ দখল করে হবে না, আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। ২৮ অক্টোবর তিন দলের কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘সংঘাত হতেই পারে। সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো যোগাযোগ থাকবে না। টাকা দিয়ে যাদের আনা হবে রাস্তায়, তারাই তাদের মধ্যে গণ্ডগোল করবে। এতে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কিছু নেই। সাধারণ মানুষ বাসা থেকেই বের হবে না। রাজনৈতিক সংঘাত এড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংঘাত তো রাজনীতিকরা বুঝবে। রাজনীতিকরা নিজেদের কথা ভাবে, সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না, ভাবলে দুই দল মিলে রাস্তা বন্ধ করতো না। যার কারণে এই অবরোধ কর্মসূচি এবং তার প্রতিরোধের কর্মসূচি। অবরোধের কর্মসূচি না দিলে প্রতিরোধের ব্যাপার আসতো না। আবার আওয়ামী লীগ যখন জনসমাবেশ করবে, তারাও প্রতিরোধ করবে। রাজনীতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার দায় রাজনীতিবিদদের, সাধারণ মানুষের নয়। সাধারণ মানুষ খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত। শহরটা এমনিতেই অচল। তারপরও তারা সম্পূর্ণরূপে অচল করে দেয়, এটি কাম্য নয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এক দল আন্দোলনের মাঠে কর্মসূচি দিয়েছে। আরেক দল যদি এটা প্রতিহত করার জন্য মাঠে নামে, তাহলে সংঘাতের শঙ্কা দেখাই দেয়। আপনি যদি আগুন দিয়ে আগুনকে প্রতিহত করতে চান, তাহলে আপনাকে ছাই-ভষ্ম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটাই বাস্তবতা। তবে, এ পর্যন্ত আমরা যেটা দেখেছি, বিরোধী দল চেষ্টা করেছে অহিংস থাকতে, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে। আমরা আশা করব যে, পুলিশ যদি বাড়াবাড়ি না করে, সরকারের পক্ষ থেকে যদি ভূমিকা না নেওয়া হয়, তাহলে শান্তিপূর্ণই হবে। আর শান্তিপূর্ণ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ সহিংসতা হলে সবারই ক্ষতির কারণ হবে। সমাধানের পথ রাজপথ নয়, আলোচনার টেবিলে খুঁজতে হবে।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৭ অক্টোবর ২৩/ এসবি

- Advertisement -
- Advertisement -