বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের ৩ পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা এবং উপজেলা মিলে ৪শ’ ৯৭টি মূল সাব রেজিস্ট্রি অফিস এবং ক্যাম্প অফিসসহ ৫০৫টি রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়োগ অভিন্ন বিধি বিধানে পরিচালিত হলেও কৌশলগত কারণে ঢাকা জেলার শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারির নিয়ম নীতি এবং রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল অনুসরণ না করে গায়ের জোরে আইনমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদ সৃজন করে জেলা কোটা উপেক্ষা করে শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কতিপয় দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারি ও অর্থলিপ্সু কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয় কয়েক বছর পূর্বে। যা রেজিস্ট্রেশন আইনের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন। শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের মধ্যে বদলিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে ওই সাংগঠনিক কাঠামো বহির্ভূত নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে তারা বেপরোয়া। কেননা তাদের নিয়োগের পরপরই ৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীই ঘুরে ফিরে বদলি হচ্ছেন শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীন একই স্থলে প্রায় ৫ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। যে কারণে তার ঘুষ বাণিজ্য, প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ দলিল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গত ১০/১০/ ২০২১ তারিখে ধানমণ্ডি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুটি অবৈধ দলিল হয়েছে যার নাম্বার ৩২৮৬ এবং ৩২৮৭ পাওয়ার চুক্তিপত্র যা সরকারী সম্পত্তির বলে জানা যায়। দলিল দাতা আজিজ আমিনুল, নেছা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, দলিল গ্রহিতা প্রিজম প্রপারর্টিস লিমিটেড এর পক্ষে হুমায়ুন আহমেদ। দলিলের মূল্য দেখানো হয়েছে ২,৬৫,৬০,০০০ টাকা। উক্ত দলিল হতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীন মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে একটি কালো রঙের ২০২৩ সালে হাইব্রিড গাড়ি ক্রয় করেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকাণ্ডও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। জয়নাল আবেদীনের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায় হলেও শশুর বাড়ি এলাকা কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ গ্রামে ১২ কাঠার উপর তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা । জাতীয় পরিচয় পত্রও পরিবর্তন করে কসবার পাইনারূপ গ্রামের শশুর বাড়ি এলাকায় নিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঐ এলাকায় ক্রয় করেছেন কয়েক বিঘা জমি। আর ওয়ান ফাইভ বাইকে চলাচল করেন, যার নম্বর : ঢাকা মেট্রো ল ৫৮-৩৫৩৫। এ প্রতিবেদক জানতে পারেন তার আরও একটি গাড়ি এফ প্রিমিও এবং নিউ R15 বাইক রয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য ঢাকার বাড্ডা থানার শাহজাদপুরে রয়েছে নিজস্ব ফ্ল্যাট। নামে বেনামে ঢাকায় বাড়ি করেছেন দুটি বলে জানা যায়। আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) আলাউদ্দিন বাবুর দাপটে এরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের ভাবমূর্তি চরম সংকটে পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সূত্র জানায়, উল্লেখিত দুর্নীতিবাজ কর্মচারীগণ রাজধানী ঢাকা ও তাদের নিজ এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালিপনা ও দুর্নীতি বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নিবন্ধন অধিদপ্তর এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা । ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীনের (পিতাঃ মোঃ নিদান মোল্লা) আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। তার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারীর অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের কতিপয় অফিস সহকারীর নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য ধানমন্ডি অফিসে জয়নাল আবেদীনকে সাবেক আইজিআর অফিসে এসে রিবন্ডিং চেয়ারে তাকে বসতে দেখে শাসিয়ে যান এবং রিবন্ডিং চেয়ারে বসার নিষেধাজ্ঞা দেন। তবুও জয়নাল আবেদীন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রিবন্ডিং চেয়ারই ব্যবহার করছেন যেখানে একজন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাঠের চেয়ার বসার কথা। নকল নবীশগণের পদোন্নতির মাধ্যমে মোহরার এবং টিসি মোহরারের সিনিয়রিটির ভিত্তিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মচারীগণকে অফিস সহকারী (কেরানী) নিয়োগের সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। নাইট গার্ড আলাউদ্দিন আলোকে দিয়ে দিনের বেলায় ডিউটি করিয়ে তাঁর মাধ্যমে ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। অফিস চলাকালীন সময়ে নাইট গার্ডকে দেখা যায় তিনি দিনে অফিস করছেন। এমনকি জয়নাল আবেদীন অফিসিয়াল কোন কাজ কর্ম করেন না, তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড পত্র নিজে না লিখে অন্যকে দিয়ে লেখান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সচেতন মহল মনে করেন যে, একজন নাইট গার্ড সারা রাত অফিসে ডিউটি না করে সারাদিন অফিসে ডিউটি করেন। মূলত জয়নাল আবেদীনের নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডের সকল দায়িত্ব পালন করেন নাইট গার্ড আলাউদ্দিন আলো।নিয়োগবিধিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে নিয়োগ পাওয়া ‘সৌভাগ্যবান’ কর্মচারীরা হলেন, জয়নাল আবেদীন, ইমতিয়ার আলম (রিমন) এবং সামিউল ইসলাম। মূলত প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল সম্পূর্ণভাবে পদদলিত করে নামসর্বস্ব একটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর। নিয়োগের সময় এদের কারো কম্পিউটার অপারেটিং সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল বহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারি কর্মচারীরা (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করলেও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী যেমন নকল নবীশ, উমেদার, পিয়ন, ঝাড়ুদার সকলেই তাদের কাছে জিম্মি। কারণ তারা আইমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি করে প্রভাব খাটিয়ে জনগণকে হয়রানি করে বিভিন্ন অসৎ পন্থায় টাকা উর্পাজন করছেন বলে জানা যায়। তাদের দাপটে কর্মচারীরা থাকেন আতঙ্কে। ক্ষমতার শিকড় অনেক গভীরে। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। বিশেষ করে ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ জয়নাল আবেদীনের আচার ব্যবহার অত্যন্ত রুক্ষ। তিনি ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের প্রতিটি নকল নবীশ, উমেদার, ঝাড়ুদার, নাইটগার্ড, দলিল লেখক সকলের সাথে ধমকের সুরে তো বটেই, কখনও কখনও কর্মচারীদের সঙ্গে বাবা মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অমার্জনীয় আচার ব্যবহার করে থাকেন। জয়নাল আবেদীনের চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বাবু আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটাই জয়নাল আবেদীনের বড় অস্ত্র। ভাবখানা যেন তিনিই আইনমন্ত্রী! সাব রেজিস্ট্রারও তাকে সমীহ করে চলেন বলে জানা যায়। অবৈধ উপায়ে অর্জিত প্রতিদিনের অর্থ বেশিরভাগ জয়নাল আবেদীনের পকেটস্থ করে থাকেন। সাব রেজিস্ট্রারের কাছে বিচার দিয়েও ভুক্তভোগী কর্মচারীরা বিচার পান না বলে জানা যায়। উল্টো আরও হেনস্থা হতে হয়। যে কারণে কেউ বিচারও প্রত্যাশা করেন না। নীরবে নিভৃতে বিচারের বাণী চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কর্মচারীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ভুক্তভোগী কর্মচারীগণ এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারী জয়নাল আবেদীনের অশালীন আচরণের বিচার দাবি করেছেন। অন্যথায় তাকে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স থেকে ঢাকার বাইরে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জয়নাল আবেদীন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সামান্য বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী ছিলেন। আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বাবুর ছোট ভাই পল্লবী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ সামিউল ইসলাম। অর্থাৎ এই পদটি শুধুমাত্র ‘অফিস সহকারী’ নামে রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ধানমণ্ডি এবং শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসেও একইভাবে মোহরার এবং টিসি মোহরারের পদোন্নতির মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মান নির্ণয়কের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সম্পূর্ণ ক্ষমতার জোরে তিনজন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে রেজিস্ট্রেশন পরিবারের অফিস সহকারী পদবঞ্চিতরা। কিন্তু যৌক্তিক এ আন্দোলন কর্তৃপক্ষের টনক নড়াতে পারেনি। রেজিস্ট্রি অফিসের প্রচলিত সাংগঠনিক কাঠামো চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে পল্লবী, ধানমণ্ডি ও শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ নিয়োগের মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এসব প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন কি না? কার স্বার্থে নিবন্ধন অধিদপ্তর এ ধরনের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে বিব্রত কিংবা সমালোচিত করছে। অভিযোগের বিষয়ে ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এসব কর্মচারীদের শাসন করতে হয়, না হলে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তবে গালাগালির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। পল্লবী ও শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সামিউল ইসলাম ও ইমতিয়ার আলমের (রিমন) সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করতে পারেননি। এ বিষয়ে সাবরেজিস্ট্রার ধানমন্ডি, ডি আর, আই জি আর ও আইন সচিব এর হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইনে প্রকাশিত নিউজের লিংক পাঠালেও তারা সিন করেছেন কিন্তু নিউজের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। জয়নাল আবেদীনের হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইনে প্রকাশিত নিউজের লিংক পাঠালে নিউজ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য না করে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি আই জি আরকে অবগত করলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানালেও, আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বহাল তবিয়তে অফিস করছেন রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ঘুষখোর জয়নাল আবেদীন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩/ দ ম দ
- Advertisement -