জাহিদুল হক রনি
আজ (৫ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫২তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের এই দিনে তিনি পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ তাদের অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যূহের সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করলে, নূর মোহাম্মদ শেখ সঙ্গীদের নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, সেসময় হঠাৎ করে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হলে,নূর মোহাম্মদ শেখ তাকে কাঁধে নিয়ে হাতের এলএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে প্রতিপক্ষকে পিছু হঠতে বাধ্য করে ঠিক সেই মুহূর্তে পাক হানাদার বাহিনীর মর্টারের একটি গোলা এসে তার কাঁধে লাগলে তিনি আহত হন। আহত হয়েও তিনি সহযোদ্ধারা যাতে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে,সেজন্য নিজের এলএমজি সিপাহীকে মোস্তফাকে দিয়ে তার কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে একাই শত্রুদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে তাদের প্রতিহত করে সঙ্গীদের নিরাপত্তা সরে যাওয়া নিশ্চিত করে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদারেরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে বেয়নেট চার্জ করে তার চোখ-মুখ খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে তিনি পিতা মাতা দু’জনকেই হারান।১৯৫২ সালে নিজ গ্রামেই কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং স্ত্রী তোতাল বিবির বয়স মাত্র ১২ বছর। তিনি দুই সন্তানের বাবা ছিলেন। ১৯৫৪ সালের শেষ দিকে তার প্রথম সন্তান হাসিনা খাতুন এবং ১৯৬৪ সালের ১৫ নভেম্বর তার দ্বিতীয় সন্তান শেখ মো. গোলাম মোস্তফা জন্মগ্রহণ করেন। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের সম্মানে ২০০৮ সালে তার জন্মস্থান মহিষখোলা গ্রামের নাম পাল্টে নূর মোহাম্মদ নগর রাখা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাষ্টের সদস্য সচিব ও চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫২তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে পবিত্র কোরআনখানি, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও গার্ড অব অনার প্রদান, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাষ্টের সভাপতি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. লুৎফর রহমান,ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন নড়াইলের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি
- Advertisement -